Published : 01 Jan 2024, 08:21 PM
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের সাজার কোনো প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের ও বাংলাদেশের সম্পর্কে পড়বে না বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সোমবার ঢাকার শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণার পর বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তির কারণে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব না পড়াটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটা হয়েছে।
“উনারাও আপিল করার সুযোগ আছে বা উনি জামিনও পেয়েছেন। সুতরাং এটা একটা চলমান আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমি আর মন্তব্য করতে চাই না।”
গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ঠকানোর মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূসসহ চার আসামিকে ছয় মাসের সাজার পাশাপাশি জরিমানাও করেছে আদালত।
ইউনূস ছাড়া বাকি তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
শ্রম আইনের ৩০৩ এর ৩ ধারায় তাদের প্রত্যেককে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরো ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একই আইনের ৩০৭ ধারায় তাদের সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
তবে আপিলের শর্তে এক মাসের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় আপাতত জেলে যেতে হচ্ছে না গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসসহ চারজনকে।
ইউনূসের বিচারকে ‘হয়রানি’ হিসেবে অভিহিত করে এর আগে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে চলার প্রেক্ষাপটে গত অগাস্টে ১০০ নোবেল বিজয়ী এবং বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে ইউনূস ‘কারারুদ্ধ হতে পারেন’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
সিভিক কারেজ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সোমবার ওই বিবৃতি আসে। ‘প্রটেক্ট ইউনূস’ নামে একটি প্রচারাভিযানও শুরু করেছে সংগঠনটি।
এর আগে মার্চে ইউনূসের মামলার বিষয়ে ৪০ জন ব্যক্তির নামে ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে একটি ‘খোলা চিঠি’ প্রকাশ করা হয়।
ওই ‘খোলা চিঠিতে’ ইউনূসের বিভিন্ন পুরস্কার ও কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, “গ্রামীণ টেলিকম বা গ্রামীণফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হননি মুহাম্মদ ইউনূস। বরং, নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে দারিদ্র্যবিরোধী মিশনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ঢাকায় তিনি সাদামাটা জীবনযাপন করেন।
“এটা দেখা কষ্টকর যে, অনবদ্য সততার একজন ব্যক্তি অধ্যাপক ইউনূস ও তার জীবনকর্মকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে এবং অব্যাহতভাবে হয়রানি এবং আপনার (শেখ হাসিনা) সরকারের তদন্তে নেওয়া হচ্ছে।”
ওই বিবৃতিদাতাদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, এডওয়ার্ড কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস ছিলেন।
বিচার চলার মধ্যে অগাস্টে ইউনূসকে লেখা একটি চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তার কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা; যা ওই সময় ইউনূস সেন্টারের ফেইসবুক পাতায় প্রকাশ করা হয়েছিল।