শীতজনিত নানা সমস্যা নিয়ে ভিড় বাড়ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।
Published : 23 Jan 2024, 01:45 PM
সাতাশ দিনের মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে এসেছেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ইশতিয়াক আহমেদ রানা; মেয়ে তার জ্বরে ভুগছে।
ভিড়ে ঠাসা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা গেল ইশতিয়াক ও রাশেদা বেগম দম্পতিকে। কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড শীতে শিশু মেয়েটার নিউমোনিয়া ধরে গেলে কিনা, তা নিয়ে তাদের দুঃশ্চিন্তা।
কাছে গিয়ে সমস্যার কথা জানতে চাইতেই ইশতিয়াক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “ঢাকায় এ বছরের মত প্রচণ্ড শীত আর আমি অনুভব করিনি৷ আমার মেয়েটা শীতে কাবু হয়ে গেছে। নিউমোনিয়া না হলেই বাঁচি।”
ইশতিয়াকের মত অনেকেই সন্তানদের নিয়ে এসেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালে, আছেন বয়স্করাও। শয্যা খালি না পেয়ে কেউ পাটি আর কাথা-কম্বল নিয়ে বসে পড়েছেন বারান্দা আর সিঁড়িতে।
রাজধানীসহ সারা দেশেই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তীব্র ঠান্ডায় নাকাল মানুষ। শীতজনিত নানা সমস্যা নিয়ে দেশের জেলা হাসপাতালগুলোর সঙ্গে ভিড় বাড়ছে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও। তাদের বেশিরভাগই শিশু আর বয়স্ক।
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে থার্মোমিটারে পারদ ক্রমশ নিচে নামছে। মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিন সকালে রাজধানীতে সূর্যের দেখা মিললেও ঘন কুয়াশা আর হিম হাওয়ায় কাঁপছে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে এলেও রোগীর চাপে চিকিৎসা পেতেও বেগে পেতে হচ্ছে।
রোগীরা বলছেন, শীতের সঙ্গে ঠান্ডা বাতাসে হাড়ে কাঁপুনি ধরে। মেঝেতে কিংবা বারান্দায় যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের অবস্থা আরও নাজুক।
মঙ্গলবার সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের বহির্বিভাগের সিঁড়ির সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন রোজিনা বেগম। কেরানীগঞ্জ থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে রিয়াদ ও জিহাদ নামে ৩ মাস ১৪ দিন বয়সের যমজ ভাতিজিদের নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি।
রিয়াদ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও জিহাদ নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রোজিনা বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে রিয়াদের তীব্র জ্বর হওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। আর আজকে আবার জিহাদকে নিয়ে আসতে হল। ডাক্তার দেখিয়েছি, পরীক্ষা দিছে। রিপোর্ট দেখার পর প্রয়োজনে ভর্তি দেবেন।”
গায়ে কম্বল জড়িয়ে রিকশায় করে বৃদ্ধ বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন রমজান মিয়া। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অন্যান্য রোগের পাশাপশি গত কয়েকদিনের ঠান্ডায় আব্বার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। সর্দি-কাশি তো আছেই। এখনই ভর্তি করাচ্ছি না, ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে বাসায় নিয়ে যেতে চাই।”
হাসপাতালের এক নম্বর ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দেখা যায়, শীতের মধ্যে কাঁথা-বালিশ আর কম্বল নিয়ে সিঁড়িতেই বিছানা পেতেছেন কয়েকজন রোগী।
এক রোগী বলেন, “ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে আমাদের বাইরে থাকতে বলা হয়েছে। বেড খালি হলে তারা ডেকে নেবে বলেছে। এভাবে শীতের মধ্যে ঠান্ডা বাতাসে কী বাইরে থাকা যায় বলেন?”
জানতে চাইলে হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, “ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ব্রঙ্কিওলাইটিস ভাইরাস সংক্রমিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং এর প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া। এটা বাড়িতে সম্ভব নয়।
“তাই অভিভাবকদের উচিত শিশুদের শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসা।”
ভর্তি হওয়া শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই সময়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যদি বাচ্চারা দ্রুত শ্বাস নেয় এবং যদি তারা শ্বাস নিতে অস্বস্তি অনুভব করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।”