আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনে ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
Published : 17 Apr 2024, 08:08 PM
ঢাকায় প্রথমবারের মত বসছে জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪।
আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনে বিশ্বের ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনসন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর ব্যবস্থাপনায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসমূহের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট দেশের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ন্যাপ এক্সপোর আয়োজন করা হয়।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ হিসেবে, তথা রিজিলিয়েন্ট কান্ট্রি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪ হবে। বাংলাদেশে নবম ন্যাপ এক্সপো আয়োজিত হতে যাচ্ছে।”
ইউএনএফসিসিসির তত্ত্বাবধানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় এ এক্সপোর আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। ইউএনএফসিসিসির এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিলে ন্যাপ এক্সপোতে উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন, ন্যাপ এক্সপো ২০২৪ এ অংশগ্রহণের জন্য ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন ইউএনএফসিসিতে রেজিস্ট্রেশন করেছের, তাদের মধ্যে ১১৪ জন বাংলাদেশি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ ৫৫০ জন অংশগ্রহণ করবেন।
এ পর্যন্ত ৫৩টি দেশ ইউএনএফসিসিসিতে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) জমা দিয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম, যেখানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে।
বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, চাহিদা এবং ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের বৈঠক হবে ঢাকার সম্মেলনে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদাপন্ন দেশগুলোর ন্যাপ- প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য জিসিএফসহ আন্য জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে এ সম্মেলন। সেই লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা চিহ্নিত করতে প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হবে।
ন্যাপ এক্সপোতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করবে। 'মোবিলাইজিং ডোমেস্টিক ক্লাইমেট ফাইন্যান্স: এক্সপেরিয়েন্স অব বাংলাদেশ' সেশনে নিজস্ব জলবায়ু ফান্ড বা ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে আলোচনা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু অবস্থার দিকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে 'বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড' প্রতিষ্ঠা করা হয়। নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এই পর্যন্ত ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ।
সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করছে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলা ও অভিযোজন প্রস্তুতিতে।
সম্মেলনের 'অ্যাডভান্সমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্লাইমেট প্ল্যানস অব বাংলাদেশ' সেশনে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ২৭ বছরে, অর্থাৎ ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে ন্যাপে গৃহীত কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।
এবারের সম্মেলনে মোট ২০টি স্টল থাকবে, যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হবে। এছাড়াও চার দিনে ১৬টি সেশনে বিশেষজ্ঞরা ‘ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপটেশন’, ‘ফিনান্সিয়াল মেকানিজম’, ‘অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকটিভিটি মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন টুলস’, ‘জেন্ডার রেস্পন্সিভ অ্যাডাপটেশন’ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ১০টি স্টলে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, পাহাড়ি অঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়, অভিযোজন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে ডেল্টা প্ল্যানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সাইক্লোন শেল্টার, মুজিব কিল্লা, রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ, জলবায়ু সহিষ্ণু নগর ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু উদ্বাস্তু, ইত্যাদি জলবায়ু অভিযোজনের বিষয় প্রদর্শন করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী-সহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।