ফারুকের মৃত্যুর ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি আদালতে মামলা হয়েছে।
Published : 01 Feb 2024, 03:53 PM
পুলিশ হেফাজতে ‘নির্যাতনে’ বডি বিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর খবর নজরে আনার পর এক আইনজীবীকে রিট আবেদন করতে বলেছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চে পত্রিকার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
তিনি আদালতকে বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে বডিবিল্ডার ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ফারুক হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।
তখন হাই কোর্ট বেঞ্চ আইনজীবী তানভীরকে রিট আবেদন করতে বলে।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে বডি বিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগে বংশাল থানার ওসি মাইনুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৩০ জানুয়ারি মামলা করেন ফারুকের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপী। জজ আদালত বুধবার মামলাটি তদন্ত করে ২৮ মার্চের ভেতরে প্রতিবেদন দিতে গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেয়।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন-বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর ইমদাদুল হক, আবু সালেহ, মাসুদ রানা ও বুলবুল আহমেদ।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফারুক হোসেন লালবাগের খাজা দেওয়ান সিং লেনের বাসা থেকে ব্যক্তিগত কাজে বের হন।
এর এক ঘণ্টা পর ফারুক স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে কায়েতটুলী ফাঁড়ির পুলিশ গ্রেপ্তার করে আটকে রেখে ‘নির্যাতন’ করছে। দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে সেখানে ছুটে গিয়ে হ্যাপী দেখেন, ফারুককে পুলিশ সদস্যরা আটকে রেখে ‘মারধর’ করেছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, হ্যাপী সেখানে এসআই ইমদাদুল হক, মাসুদ রানা, বুলবুল আহমেদসহ অন্যদের পা ধরে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। তখন ইমদাদুল হক তাকে বলেন, ফারুক ‘অনেক বড় ক্রিমিনাল’, তাদের গালিগালাজ করেছেন, এমনিতে ছাড়া যাবে না। ছাড়াতে হলে ‘এক লাখ টাকা’ লাগবে। তখন হ্যাপী বলেন, তার স্বামী সিটি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। আগে বডি বিল্ডার ছিলেন, ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ খেতাব পেয়েছিলেন। তিনটি ছোট ছোট সন্তান, তার আয়েই সংসার চলে, তাকে ছেড়ে দিন।
পরে পুলিশ সদস্যরা ‘৫০ হাজার টাকা’ দাবি করা ছাড়াও ‘কুপ্রস্তাব’ দেন বলে অভিযোগ করেছেন হ্যাপী।
তিনি মামলার আরজিতে বলেছেন, রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফারুককে ‘ব্যাপক মারধর’ করেন। ওই পুলিশ সদস্যরা বলেন, ফারুক ‘মাদক ব্যবসায়ী’। তারা কিছু করতে পারবে না। তাদের ‘বড় স্যার’ জানে কী করবে। কিছুক্ষণ পর ফারুককে মোটর সাইকেলে করে বংশাল থানার দিকে নিয়ে যায়।
হ্যাপী পরে ওসি মাইনুল হোসেনের হাত-পা ধরে কাকুতি-মিনতি করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ওসি তাকে পরদিন সিএমএম আদালতে যোগাযোগ করতে বলেন।
এই নারী বলছেন, পরদিন তিনি আদালতে গেলে মারধরের কথা তাকে বলেন ফারুক। তার কিছু হলে আদালতে বিচার চাইতে বলেন। ফারুকের বিরুদ্ধে ১৫০ গ্রাম গাজার মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন হ্যাপী। বিকালে তিনি বাসায় ফিরে যান।
পরে ১৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তি হ্যাপী ফোন করে ফারুকের মৃত্যুর খবর দেন।
মামলায় হ্যাপী বলেছেন, হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তিনি স্বামীর লাশ দেখতে পান। ফারুকের গলায়, বুকে, পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।
ফারুককে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে লালবাগ বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফারুক হোসেন একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। দুইদিন পর জেলখানায় অসুস্থ্ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
তিনি দাবি করেন, “ফারুককে পুলিশের নির্যাতনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ফারুক মাদকাসক্ত ছিল।”
নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ, বংশালের ওসিসহ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা