ছয় রাষ্ট্রদূতের চলাচলে ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ আর দেবে না সরকার

বাংলাদেশে অন্য সব দেশের মিশন প্রধানরা যে নিরাপত্তা সুবিধা পান, এখন থেকে ওই ছয় দেশের ক্ষেত্রেও সেটাই প্রযোজ্য হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 03:17 PM
Updated : 15 May 2023, 03:17 PM

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ ছয় দেশের মিশন প্রধানরা চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি যে নিরাপত্তা সুবিধা (পুলিশ এসকর্ট) এতদিন পেয়ে আসছিলেন, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

অর্থাৎ, বাংলাদেশে অন্য সব দেশের মিশন প্রধানরা যে নিরাপত্তা সুবিধা পান, এখন থেকে ওই ছয় দেশের ক্ষেত্রেও সেটাই প্রযোজ্য হবে।  

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘ভালো থাকার কারণে’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বা এসকর্ট সুবিধা পেতেন, তা আমরা আর দেব না।”

এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ছয়জন অতিরিক্ত এই সুবিধা পেতেন, এখন অন্যরাও চাইছে। কিন্তু আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন এমন নাই যে কারও বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে। সে কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

“তাছাড়া, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে এ ধরনের কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। আমরা একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” 

সরকারের এই সিদ্ধান্ত রোববার থেকেই কার্যকর হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন। 

পুলিশ সদস্যের সংকটের কারণে আপতত এই সুবিধা বন্ধ করার কথা জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, ভারত, সৌদি আরবসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্রদূতের গাড়ির আগে পেছনে দুটি প্রটেকশন গাড়ি থাকে। এটা বহাল আছে। তবে পেছনের প্রটেকশনের গাড়ির পেছনে আরেকটি গাড়ি থাকত (৬ মিশন প্রধানের ক্ষেত্রে), সেটা পুলিশ সংকটের কারণে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

“পেছনের গাড়ির পেছনে যে আরেকটি গাড়ি থাকত এটা ছিল অতিরিক্ত সুবিধা। কোনো পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে এই অতিরিক্ত সুবিধাটি দেওয়া হত। বর্তমানে পুলিশ সংকটের কারণে আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংকট দূর হলে আবার তা দেওয়া হবে। তবে এর মধ্যে যদি তারা আনসার সদস্য চায় তা নেওয়ার তাদের সুযোগ রয়েছে।” 

তাছাড়া তাদের প্রযোজনীয় সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল আছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শুধু কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে। 

কেউ চাইলে সরকারের কাছে আবেদন এবং খরচ বহনের মাধ্যমে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সুবিধা নিতে পারবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যদি কেউ অতিরিক্ত সুবিধা নিতে চান, তাহলে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে খরচ তাদেরকে বহন করতে হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

বিদেশি কুটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য নজরে আসার কথা জানিয়ে সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তাতে বলা হয়, প্রতিটি দূতাবাসেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বিধান অব্যাহত রেখেছে এবং রাষ্ট্রদূতদের পুলিশের দেওয়া গানম্যানও নিয়োজিত রয়েছে। নিরাপত্তা প্রত্যাহার সম্পর্কিত এই ‘বিভ্রান্তিকর খবরটি সঠিক নয়’।

কয়েক বছর আগে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিককে অলিখিতভাবে গাড়িসহ তাদের যাতায়াতে বাড়তি লোকবল দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বর্তমানে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণাধীন আছে। তাই তাদেরকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের কোনো আবশ্যকতা নাই।

“পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্য পরিধি বৃদ্ধির জন্য এই বাড়তি সুবিধাটি এখন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধা প্রদান করা হয় না।”

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দূতাবাস থেকে একই ধরনের সুবিধার জন্য অনুরোধ পাওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “এ লক্ষ্যে তাদের সকলের সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে একটি চৌকস দল তৈরি করেছে। বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের খরচে এ সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবেন।

“কোনো দূতাবাস আনসার সদস্যদের এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে বা বাড়তি সুবিধা নিতে চাইলে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানালে আমরা সেই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করব।”