“সংস্কৃতি বিপন্ন হলে পরিচয় বিপন্ন হবে,” বলেন অধ্যাপক কাজী মদিনা।
Published : 29 Oct 2023, 08:53 PM
সুর-ছন্দ, কথা ও কবিতায় প্রতিষ্ঠার ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে দেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন ও চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
নিপীড়িত মানুষের গান গাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এবারের স্লোগান ছিল-‘সংস্কৃতির সংগ্রামে দ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির লড়াইয়ে অজেয় শক্তি’।
সংস্কৃতিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে দুজন প্রথিতযশা শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন- অধ্যাপক কাজী মদিনা ও শিল্পী আনোয়ার হোসেন।
লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক কাজী মদিনা বলেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতির একটি অনির্বাণ বাতিঘর। এই বাতিঘর না থাকলে স্বদেশে তো বটেই, বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি ও তার প্রজন্ম অকূল সমুদ্রের পথের দিশা পেত না এবং তাদের মাতৃভূমি ও মাতৃ-সংষ্কৃতির শেকেড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক শেকড়হীন উপজাতিতে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যেত।
“সভ্যতা মানুষের কীর্তির উপর হয়। সংস্কৃতি মানুষের পরিচয় বহন করে নিয়ে যায়। সুতরাং আমাদের সংস্কৃতি যদি বিপন্ন হয়, তাহলে আমার পরিচয় বিপন্ন হবে।”
সংস্কৃতিজন কাজী তামান্না বলেন, “একথা মনে রাখতে হবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দেশটাকে স্বাধীন করে নাই। এদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সব সময় এগিয়ে থেকেছে। এখন এত রাজনীতিকরণ হচ্ছে- যা আমরা দেখিনি।”
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, “এমন একটি সময়ে আমরা ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি, যখন রাজনীতির মধ্যে সংস্কৃতির বড় অভাব। রাজনীতির মধ্যে যদি সংস্কৃতি গড়ে না ওঠে, সেই দেশের সমাজে মানুষ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।
“আজকে আমরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি। কঠিন অবস্থা অতিক্রম করতে হয়েছে আমাদের। কেন? কারণ আমরা সঠিকভাবে সংস্কৃতির চর্চা করে রাজনীতিকে সংস্কৃতিবান করতে পারিনি।”
রাজনীতি সংস্কৃতির বাইরে নয় মন্তব্য করে অধ্যাপক বদিউর বলেন, “বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিন্দুমাত্র সংস্কৃতির ছোয়া নেই। আমি গানবাদ্যের সংস্কৃতির কথা বলছি না, আমি বলছি রাজনীতির সংস্কৃতির কথা।”
আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় সমাজের নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি নিয়ে উদীচীর নতুন প্রযোজনা ‘ধর ধর চোর চোর'।
উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম বক্তব্য দেন।