সোমবার ও মঙ্গলবার পোশাক কারখানা ছুটি হলে ভিড় বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
Published : 07 Apr 2024, 10:33 PM
ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে ঢাকা ছাড়তে বাস টার্মিনাল ও ট্রেনে যাত্রীর চাপ থাকলেও উপচে পড়া ভিড় এখনো দেখা যায়নি। তবে শহরের ভেতরে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ বেশ কম।
তারপরও আগেভাগে বাড়ি ফেরা শুরু হয়ে যাওয়া আর রোববার শবে কদরের সরকারি ছুটিতে দিনভর রাজধানীর সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যানজট না থাকায় গন্তব্যে যাওয়া গেছে দ্রুতই।
এবার ঈদের তিন দিন ছুটি শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে। পরের দিন শনিবার। রোববার পয়লা বৈশাখের সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে পাঁচ দিন। যারা সোম ও মঙ্গলবার ছুটি নিতে পেরেছেন, তাদের জন্য ছুটি হয়ে গেছে ১০ দিন। কারণ, রোববার শবে কদরের এবং তার আগে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি মিলেছে।
এ কারণে এবার আগেভাগে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ বেড়েছে।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ চলে গেছেন এরই মধ্যে। চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা দুই দিন ছুটি জোগাড় করতে পেরেছেন, তারাও ছেড়ে গেছেন শহর।
কেউ স্ত্রী সন্তান বা পরিবারের অন্য স্বজনদের পাঠিয়ে দিয়েছেন আগেই। ফলে নগর পরিবহনগুলো যাত্রীর জন্য ডেকে হয়রান হচ্ছে।
উত্তর, দক্ষিণ বা পশ্চিমাঞ্চল- সব দিনেই সড়ক হয়েছে উন্নত, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা বিআরটির ফ্লাইওভারগুলো চালু হয়েছে, ফলে এখন পর্যন্ত সড়কে চলার পথ মোটামুটি নির্বিঘ্ন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় এখন দেখা যায় কদাচিৎ, ট্রেনেও এখনো সময় বিপর্যয়ের খবর নেই।
মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস বা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফেরার প্রবণতাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার বাড়ি ফেরায় এখন পর্যন্ত বলার মতো দুর্ভোগ নেই।
তবে সোমবার ও মঙ্গলবার পোশাক কারখানা ছুটি হলে ভিড় বাড়বে বলেই মনে করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সড়কের কী চিত্র
বিজয় সরণিতে দায়িত্ব পালন করা ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, “রাস্তায় গাড়ি অনেক কম। তবে গতকাল প্রচুর গাড়ি ছিল। ঈদের কারণে এখন আস্তে আস্তে রাস্তা ফাঁকা হতে থাকবে। দুই দিন পরে তো সিগন্যালই দেওয়া লাগবে না।”
তেজগাঁওয়ের উত্তর বেগুনবাড়ীর লাভ রোডে ডাব বিক্রেতা জালাল উদ্দিন ভ্যানে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি ডাব নিয়ে এসেছেন সকাল ১১ টায়। দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি।
তার বাড়ি ময়মনসিংহে। বাসায় আরও কিছু ডাব আছে, এগুলো বিক্রি করে ঈদের আগের রাতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি বলেন, “বেচাকেনা কইম্যা গেছে মামা। কাস্টমার নাই। দুইদিন আগেও জাগাডা ভরা আছিল। অহন খালি। ভাবছিলাম কিছু বেচতারাম।”
তেজগাঁওয়ে কুনিয়াপাড়ায় তিন রাস্তায় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশার চালক দুলাল মিয়া যাত্রী পাচ্ছিলেন না।
হতাশার কণ্ঠে তিনি বলেন, “মানুষ তো গেছেগা। আগের মতো অইব না ট্রিপ, কথা বুইচ্ছেন? এহন হঠাতে যাত্রী পাওয়ন যায়।”
শিক্ষাঙ্গন ফাঁকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাস তো এখন প্রায় ফাঁকা। যারা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, সামনেই বিসিএস পরীক্ষা তারা ও যারা রাজনীতিতে যুক্ত তারা কেউ কেউ রয়ে গেছে। আর আমাদের হলসহ অনেক হলেই ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মচারীরাও ঈদের ছুটিতে চলে গেছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ইমন বলেন, “৪ ও ৫ তারিখ থেকে ফাঁকা হতে শুরু করেছে আমাদের ক্যাম্পাস। এখন তো প্রায় সবাই চলে গেছে। খুব জরুরি কাজ ছাড়া আসলে কেউ নেই ঢাকায়।”
সরকারি তিতুমীর কলেজের নিরাপত্তা কর্মী মো. মোস্তফা বলেন, “মামা সবাই চইলা গেছে, হল পুরা খালি। আশেপাশে ফুটপাতের দোকানপাটও বন্ধ হইয়া গেছে। ঈদের পরে খুলবে।”
মোহাম্মদপুর চাঁনমিয়া হাউজিংয়ের মরিয়ম ভিলার নিরাপত্তা কর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, “ভাড়াটিয়া যারা চাকরিজীবী তারা আগামীকাল বা পরশু অফিস শেষে যাবে। আর অন্য সবাই ঈদ করতে চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে। বাসা এখন প্রায় খালি।”
চাঁনমিয়া হাউজিংয়েরই বাঁশবাড়ী এলাকায় একটি মেসে থাকেন ৫ জন। সবাই চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই ঈদে দেরিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাদের। তবে বাধ্য হয়ে আগেই চলে যেতে হয়েছে।
সেই পাঁচ জনের মির্জা আল মামুন আগেভাগে বাড়ি যাওয়ান কিষয়ে বলেন, “খালা ছুটি নিয়ে চলে গেছে। এখন থাকার অবস্থা নেই। খাবারে ভোগান্তি হবে। তাই চলে গেলাম।”
বিজয় সরণি এলাকায় বর্ণমালা ভিআইপি হোস্টেলে থাকেন তাহসেন আহমেদ মিশুক। তারা দুইদিন ধরে বাইরে খাচ্ছেন। কারণ, কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, “আমরাও আজ-কালের ভেতরে চলে যাব। হোস্টেল এখন পুরোটা খালি। কেউ নেই।”
কারখানায় ছুটি কবে
গুলশানে এডিসন পাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, “আমাদের কর্মী দুই জায়গায় আছে। কিছু আছে কারখানায়, কিছু হেড অফিসে। আগামীকাল একটা ওয়ার্কিং ডে রয়েছে। কাজ শেষে ছুটি শুরু হবে। তবে অনেকেই অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছে। তারা ১৮ তারিখে ফিরবে।”
তেজগাঁও শিল্প এলাকার কুনিপাড়ায় স্ট্যান্ডার্ড ফিনিস ওয়েল কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মী হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাদের ফ্যাক্টরি এখনো ছুটি হয় নাই। কাল বা পরশু ছুটি হবে হয়ত।”
নাবিস্কো বিস্কুট অ্যান্ড ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা কর্মী আতাউর রহমান বলেন, “আরেকদিন চলবে ফ্যাক্টরি, এরপর সবাই চলে যাবে। আমরা যারা নিরাপত্তার কাজ করি আমরা থাকমু। ঈদের পরে অন্যরা ফিরলে আমরা যামু।”
‘তখন তো ঈদ থাকবে না’- এমন কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হ, ঈদ থাকব না। তবুও যামু। পরিবারের সঙ্গে দেখা হইব, এইটাই বড় কথা।”