চালকদের ঘাতক তকমা দিয়ে চলছে ‘এনজিও ব্যবসা’ : অটোরিকশা ইউনিয়ন

ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা এবং হালকা যানবাহন চালকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2023, 12:41 PM
Updated : 17 Feb 2023, 12:41 PM

বর্ধিত লাইসেন্স ফি, ডোপ টেস্ট প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার, অটোটেম্পু, অটোরিকশাচালক শ্রমিক ইউনিয়ন।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে লাইসেন্সের বর্ধিত ফি প্রত্যাহার, লাইসেন্সের ধরন অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ, হালকা যানবাহন চালকদের উপর জুলুম বন্ধ, পেশাদার লাইসেন্সের সঙ্গে ডোপ টেস্টের ‘অমর্যাদাকার’ শর্ত বাতিল, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে হালকা যানবাহন চালকদের রাষ্ট্রীয় খরচে অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং সড়ক পরিবহন আইনে ‘শ্রমিক স্বার্থবিরোধী’ ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানানো হয়।

এসময় যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত ছাড়া চালকদের দায়ী করা বন্ধ করতে বলেন শ্রমিক নেতারা।

বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, “গাড়ি চালকদের গায়ে ঘাতক ট্যাগ লাগিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে চলছে রমরমা এনজিও ব্যবসা। গাড়ি চালকদের ঘাতক উপাধি দেওয়ার আগে তারা ভাবেন না বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮- এই দুটি আইনে নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন গাড়ি চালকরা নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র পায় না, কেন চাকরির নিরাপত্তা নেই?”

সমাবেশে চালকদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বক্তরা প্রশ্ন রাখেন, “কেন চাকরি হারানোর পর ২৫-৩০ বছরের দক্ষ চালককে কপর্দক শূন্য হাতে ভিক্ষুকে পরিণত হতে হয়? কেন দৈনিক আট ঘণ্টার স্থলে ১৪-১৬ ঘণ্টা ডিউটি করেও পরিবারের ভাত-কাপড়-চিকিৎসা আর থাকার ব্যবস্থা করার মতো আয় করতে পারে না? পরিবহন আইন লঙ্ঘনের কারণে গাড়িচালকের শাস্তি হলেও কেন গাড়ির মালিকের শাস্তি হয় না? কেন পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রাইভেট গাড়ির চালকদের ন্যূনতম আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে? অথচ চালকদের চাকরির নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, নির্ধারিত দৈনিক কর্মসময়, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা সড়ক দুর্ঘটনা রোধের অন্যতম শর্ত।”

এছাড়াও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা এবং হালকা যানবাহন চালকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান নেতারা।

তারা নিত্যপণ্যের বাজারদরের সঙ্গে প্রতি বছর মজুরি সমন্বয়ের বিধান, প্রাইভেট গাড়ির চালকসহ সকল শ্রমজীবীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিও জানান।

সব ক্ষেত্রে আট ঘণ্টা কর্মদিবস, ন্যায্য মজুরি, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক, চাকরির নিরাপত্তা, সাপ্তাহিক ও উৎসব ছুটি, গ্রাচ্যুয়িটি, ক্ষতিপূরণসহ শ্রমস্বীকৃত অধিকারসমূহ বাস্তবায়ন করা, শ্রম আইন ও সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থার দুর্নীতি বন্ধ করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে বলেছেন শ্রমিক নেতারা।

এছাড়া শুধু পেশাদার লাইসেন্সে ডোপ টেস্টের হয়রানিমূলক শর্ত বাতিল করে সড়ক-মহাসড়কে ‘র‌্যানডম সেম্পলিংয়ের’ মাধ্যমে ডোপ টেস্টের বিধান চালুর দাবি তুলা হয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য যানবাহনের বীমা করতে চালকের জীবনবীমা বাধ্যতামূলক করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ডাটাবেজের তথ্য অনুসারে পেশাদার গাড়িচালকদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধা, হেলথ কার্ড, রেশন কার্ডের ব্যবস্থাসহ আরও বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।

এর আগে প্রেস ক্লাবের স্বাধীনতা হলে ইউনিয়নের ২০২২-২৫ মেয়াদের নবনির্বাচিত কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেন নির্বাচন সাব কমিটির চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান লিপন ও নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার আলী।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি বিরেশ চন্দ্র দাস, সহসভাপতি আলমগীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, সহসাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল মিয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক জিল্লুর রহমান সবুজ, সহ-প্রচার সম্পাদক দুলাল হাওলাদার, ক্রীড়া সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সমাবেশে বক্তব্য দেন।