“এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে,” বলেন সিইসি।
Published : 25 Apr 2024, 03:42 PM
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার আশঙ্কা করে যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর তাগিদ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, “দেশে নির্বাচনে আবেগ অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
“যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে৷ বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে সকল বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
আচরণবিধি মানতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি অনুরোধ
বৈঠক শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার যাতে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে আচরণবিধি অনুসরণে মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“সবার আলোচনার বিষয় ছিল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, আর কী ধরনের সহায়তা দরকার সেটা- প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ জেলায় কী সমস্যা আছে, তা বলেছে।”
মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব খাটাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে ইসি নজর রাখবে বলে জানান ইসি সচিব জাহাংগীর।
“আচরণবিধি যাতে সবাই যথাযথভাবে প্রতিপালন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা অনুরোধ করেছে। কমিশনও সেটা আশ্বস্ত করেছে- সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।”
ইসি সচিব জানান, প্রতি ইউনিয়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রতি উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রয়োজেনে অতিরিক্ত জনবল দেওয়া হবে। জেলা কোর কমিটির চাহিদা থাকলে অতিরিক্ত ফোর্স দেওয়া হবে। সাধারণ কেন্দ্রে চারজন পুলিশ সদস্য, অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পাঁচজন সদস্য থাকবে। পার্বত্য জেলার নির্বাচনে সতর্কতার জন্য অধিক সতর্কতা অবলম্বের জন্য বলা হয়েছে।
সচিব জানান, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ভোটের দিন সকালে ব্যালট গেলে যে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হবে, কমিশন তা বিবেচনা করবে বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, “আজকের সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা (মাঠ প্রশাসন) যেভাবে নিরপেক্ষতা, সততা, নিষ্ঠার সাথে যে দায়িত্ব পালন করেছে, সেই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।
“স্থানীয় নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে, সেখানে প্রতিযোগিতাটা বেশি হবে- এজন্য আইনশৃঙ্খলা সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সহিংসতার আশংকা না থাকলে কোথাও কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুই ইউপি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ না করায় স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে ওই দুই চেয়ারম্যানের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশ স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।
এই দুই চেয়ারম্যানের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে ইসি আপিল করবে বলে জানান সচিব জাহাংগীর।
“মামলার আদেশের কপি এখনো পাইনি। পেলে আপিল করা হবে।”সিইসির সভাপতিত্বে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেড়শ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮ মে।
তবে প্রথম ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৬ জন। নির্বাচনে তিন পদে এখন ভোটের মাঠে আছেন ১ হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থী।
দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোটগ্রহণ হবে। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৮৫ উপজেলার ভোট হবে চার ধাপে।
সবশেষ ২০১৯ সালে চার ধাপের উপজেলা ভোটে প্রায় পাঁচশ উপজেলার মধ্যে ৪৬৫ উপজেলায় ভোট হয়। সেসময় তিনটি পদে সব মিলিয়ে ২২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জন নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
পুরনো খবর-
উপজেলা ভোট: প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৬ জন