জন্মদিনে এবার দোয়াই কবি হেলাল হাফিজের কাছে ‘উপহার’

দ্রোহ ও প্রেমের কবি এখন অসুস্থ হয়ে আছেন হাসপাতালে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 07:46 PM
Updated : 6 Oct 2022, 07:46 PM

দ্রোহ ও ভালবাসার কবি হেলাল হাফিজ অসুস্থ হয়ে রয়েছেন হাসপাতালে, সেখানেই কাটছে তার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী।

জন্মদিনের প্রাক্কালে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বরেণ্য এই কবি।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ।

অসুস্থ হয়ে এখন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হেলাল হাফিজ বলেন, “এবারের জন্মদিনে আমি তো ভালো নেই। খুব অসুস্থ। গত দু’বছরে কয়েকটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

“আমাদের কবিতাপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে এবং নির্দেশে সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) দু’বার চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু শরীর কিছুতেই সুস্থ হচ্ছে না।”
বৃহস্পতিবার হেলাল হাফিজকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘নান্দিক’ সম্পাদক কবি ইসমত শিল্পী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হেলাল হাফিজ শারীরিক এবং মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দুদিন আগে একটু ভালো ছিল। আজকে বললেন, শরীরটা একটু নরম নরম লাগছে, মাথা ঘুরছে। ব্লাড সুগার সকালে নরমাল ছিল, দুপুরে খাওয়ার পর বেড়েছে। আমরা থাকাকালীন সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দেখে গেছেন।"

এদিকে কবির জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ সন্ধ্যা ও কবির কবিতা নিয়ে রচিত ‘ফুল ও ফুলকি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৫ম তলায় অনুষ্ঠানটি হবে। শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আবৃত্তি হবে কবি হেলাল হাফিজের কবিতা। বইটি লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শারীরিক নাজুক অবস্থার কারণে উপস্থিত থাকা অনিশ্চিত জানিয়ে হেলাল হাফিজ বলেন, “জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থাকতে পারবো কিনা বলতে পারছি না। কারণ শরীর খুব নাজুক। আপ্রাণ চেষ্টা করব অনুষ্ঠানে থাকতে।”

সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া চেয়ে হেলাল হাফিজ বলেন, “দেশবাসীর কাছে আমার ঐকান্তিক নিবেদন থাকবে, সবাই যেন আমার আরোগ্যের জন্য দোয়া করেন। এই দোয়া হবে আমার জন্মদিনের সর্বোচ্চ সেরা উপহার। যারা কবিতা ভালোবাসেন এবং যারা কবিতা ভালোবাসেন না, তাদের কাছেও দোয়া করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।”

কবি হেলাল হাফিজের শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে নিজ শহরেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে একই বছর কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। 

১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার আড়াই দশক পর ২০১২ সালে পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’।

হেলাল হাফিজ সাহিত্যে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।