এক নারীর মামলার পর পহেলা বৈশাখ রাতের ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপর তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 18 Apr 2024, 12:15 AM
রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে একটি বারের সামনে পহেলা বৈশাখে এক নারীকে মারধরের অভিযোগে তিন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত রোববার মধ্যরাতের ওই ঘটনার পরদিন গুলশান থানায় মামলার পর মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
বুধবার ডিএমপির ডিবি প্রধান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়ে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এবং অভিযোগকারী ওই নারীসহ সবাই ওই রাতে বারে মদপান করে বেরিয়ে এসে বেসামাল অবস্থায় ওই ঘটনা ঘটান; যেটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মদ পানের লাইসেন্স না থাকার পরও বার কর্তৃপক্ষ কেন তাদের কাছে মদ পরিবেশন করেছে সে বিষয়ও ডিবি খতিয়ে দেখবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে ‘ক্যাফে সেলেব্রিটা’ নামের একটি বারের সামনে রোববার রাতে হৈ হল্লা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন নারী। ওই ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন নারী হাতাহাতি, চিৎকার, একে অপরের চুল ধরে টানছেন, কয়েকজন মিলে একজনে মারছেন এবং তাদের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ থামানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে একজন নারীর পরিধেয় শাড়ি খুলে ফেলেছেন তার ওপর হামলাকারীরা।
ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই নারীরা সবাই ওই বারে মদপান শেষে বেরিয়ে এসে হাতাহাতিতে জড়ান।
“আমরা এই নগরে সবাই বাস করি। আর নগরে বাস করতে গেলে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। কোনো পুরুষ বা নারীর মদ্যপানের লাইসেন্স থাকলে বৈধ বার থেকে মদ পান করতেই পারে। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু গত পহেলা বৈশাখের রাতে গুলশানের মতো একটি এলাকা যেখানে অভিজাত পরিবারের বসবাস, সেখানে তারা মদ পান করেছেন। তাদের কারও কোনো লাইসেন্স ছিল না।”
লাইসেন্সহীন কারও কাছে বার কতৃপক্ষ মদ বিক্রি করতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ”তাদের উচিৎ ছিল এই সকল নারীদের মদের লাইসেন্স পরীক্ষা করা। এমন কি এই নারীদের কাছে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ বিক্রি করেছে বার কর্তৃপক্ষ, যা পান করে তারা মাতাল-বেসামাল হয়ে পড়েন। বারের লোকজনের উচিৎ ছিল বেসামাল নারীদের নিয়ন্ত্রণ করা। এই নারীরা বার থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়ালেন, যা গুলশানের বাসিন্দারা দেখলেন। তারা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলেন।ৎ
“আমি মনে করি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এ ভিডিও দেখে ভাববে শহরের রাস্তায় নারীরা মাতলামি করে, মারামারি করে… এটা কোনো অভিভাবকই মেনে নিতে পারবেন না।”
ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন বলেন, ”এই নারীরা কারও না কারও সন্তান। তাদের অভিভাকদের উচিৎ মেয়েরা কোথায় যায়, কি করে সেদিকে খেয়াল রাখা। আজকে এই নারীরা বারে গিয়ে মদ পান করে এমন কার্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। যে মেয়েকে তারা মেরেছে সেই মেয়েটিও মাতাল ছিল।
”এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী একটি অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে বারগুলো লাইসেন্স ছাড়া মদ বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিব।”
এ বিষয়ে ক্যাফে সেলিব্রিটার মহাব্যবস্থাপক রনজিত বালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তরুণীদের হাতাহাতির ওই ঘটনা ঘটেছে রাত দেড়টা থেকে পৌনে ২টার দিকে। আর তাদের বার বন্ধ হয়ে যায় রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে।
তবে তখন পাশেই তাদের একটি কফি শপ খোলা ছিল, যেখানে এই মেয়েরা বসে ছিলেন বলে দাবি তার।
তাহলে কী তারা বারে বসে মদ পান করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে রনজিত বলেন, “বিষয়টা আমি ক্লিয়ারলি এখন বলতে পারছি না, আমাকে একটু চেক করতে হবে।”
তার দাবি করেন, সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েই বৈধ গ্রাহকদের কাছে মদ বিক্রি করেন। তাদের ওখানে অবৈধ কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।