পূর্বপরিচিত বাসের এক হেলপার থেকে তথ্য পেয়ে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে প্রায় ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা বলে অভিযোগ।
Published : 20 Dec 2023, 11:45 PM
পথরোধ করে প্রাইভেট কারে তোলার পর এটিএম কার্ড থেকে টাকার পরিমাণ জেনে নেন তারা। এরপর ওই ব্যক্তির ফোনে ব্যাংকের অ্যাপ ডাউনলোড করেন। সেটি দিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় সাত লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
শাহাদাত সরদার নামে ঢাকার ওই ব্যক্তিকে ‘অপহরণের’ সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে পুলিশের দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) গ্রেপ্তারের পর উঠে এসেছে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রেপ্তার দুই এসআই তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস ঢাকার শাহ আলী থানায় কর্মরত ছিলেন।
ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা।
এ ঘটনায় দুই এসআইয়ের সঙ্গে আবু সুফিয়ান নামে বাসের এক হেলপারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে।
অপহরণ করে টাকা আদায়ের এ ঘটনায় আরও যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রুবাইয়াত জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার দুই এসআই রিমান্ডে আছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
শাহাদতের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগের বিষয়ে এবং তার পেশা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। বলেন, “বিকালে আপনার অফিসে এসে কথা বলব। এখন কিছু বলব না।”
এটুকু বলেই তিনি লাইন কেটে দেন। পরে সন্ধ্যায় আবারও ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
মিরপুর এলাকায় ৯ ডিসেম্বর ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এ ঘটনার ছয় দিন পর মামলা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুই এসআইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়া হলেও সেদিন বিকালেই তাদের আদালতে তোলা হয়। তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করে।
থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, শেরে বাংলা নগর থানায় শাহাদত সরদার নামের ওই ব্যক্তি তাকে কয়েকজন ‘অপহরণ’ করে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্তে নামে। মামলার পর এ দুইজনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া করতে পাঁচ দিন লেগে যায়।
পুলিশ সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে যে প্রাইভেট কারে করে তাকে অপহরণ করে সেটির নম্বরসহ সবাইকে শনাক্ত করে। এরপর নিশ্চিত হয় অপহরণকারী দুইজন পুলিশ সদস্য এবং তারা শাহ আলী থানায় কর্মরত আছেন।
শাহ আলী থানা তদন্তে নেমে দেখতে পায়, প্রায় দুই বছর আগে পুলিশে যোগ দেওয়া এই দুই এসআইয়ের এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে প্রথম থেকেই শেরে বাংলা নগর এবং শাহ আলী থানা পুলিশ পুরো বিষয়টি গোপনীয়ভাবে করে।
কী অভিযোগ ছিল শাহাদতের
মামলার এজাহারে শাহাদত বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে শেরে বাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে তাকে না পেয়ে ফেরার পথে একটি প্রাইভেট কার তাকে বহনকারী রিকশার গতিরোধ করে। পরে গ্রেপ্তার দুই এসআইসহ তিনজন প্রাইভেট কার থেকে নেমে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দিয়ে তাকে প্রাইভেট কারে তুলে নেয়।
“প্রাইভেটকারে তুলে নেওয়ার পরপরই হাতকড়া এবং কালো কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে ফেলা হয়। পরে গাড়ির মধ্যেই মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং নগদ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।”
পরে তাকে একটি বাসায় নিয়ে যায় বলে শাহাদত এজাহারে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, “এরপর মানিব্যাগে থাকা ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে অপহরণকারীরা পিন কোড চায়, না দিলে মারধর করে। পরে পিন কোড নিয়ে বুথে গিয়ে ব্যালেন্স চেক করে ফিরে আসে।
“পরে অপহরণকারীরা শাহাদতের মোবাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘নেক্সাস পে’ অ্যাপ ইনস্টল করে এবং সেখান থেকে সিটি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তিন দফায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা স্থানান্তর করে সাদা কাগজে সই নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১ নম্বরে ছেড়ে দেয়।”
গত ৯ ডিসেম্বরের ওই ঘটনা ছয় দিন পর থানায় অভিযোগ নিয়ে যান শাহাদত। দেরির কারণ হিসেবে বলেন, মারধরের কারণে অসুস্থ থাকায় এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে।
শেরে বাংলা নগর থানার পুলিশ জানায়, এ দুই পুলিশ সদস্য ছাড়াও আবু সুফিয়ান মোল্লা নামে বাসের এক হেলপার ছিল ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়। সুফিয়ানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহাদতকে টার্গেট করে দুই এসআই।
সুফিয়ানকে রিমান্ডে নেওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে শাহাদত বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে। তার কাছে অনেকেই টাকা পাবে। ‘তাকে ধরলেই টাকা পাওয়া যাবে’-এমন তথ্য সুফিয়ান পূর্ব পরিচিত দুই এসআইকে জানানোর পর তারা অপহরণ করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে।
তবে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ শাহাদতের কাছে কারা টাকা পাবেন এমন কোনো ব্যক্তিকে এখনও পায়নি।