পদ্মাসেতুতে ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ইঞ্জিন, চীনের কোচ

পদ্মা সেতু হয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2023, 01:46 PM
Updated : 3 April 2023, 01:46 PM

প্রথম যে ট্রেনটি পদ্মা সেতু পার হবে, তার ইঞ্জিন আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেটি টেনে নিয়ে যাবে চীন থেকে আনা সাতটি কোচ।

ইঞ্জিন এবং কোচ এরই মধ্যে রেলওয়ের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

পদ্মা সেতু হয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুর আগের দিন সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল) অসীম কুমার তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে নতুন ১০০টি কোচ কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোচ এসে পৌঁছেছে। সেই কোচের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ব্রডগেজ ইঞ্জিন জুড়ে করা বিশেষ ট্রেন পদ্মাসেতু পরীক্ষামূলকভাবে পার হবে।

৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে রেললাইন তৈরির কাজ আগেই শেষ হয়েছিল। শুধু একটি স্লিপারের অভাবে সাত মিটার ঢালাইয়ে দেরি হয়। গত বুধবার সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে রেলপথের সেই ৭ মিটার অংশে কংক্রিটের ঢালাই কাজ শেষ হয়।

কংক্রিট জমাট বাঁধার জন্য ন্যূনতম ৪৮ ঘণ্টা প্রয়োজন হয়। ৭২ ঘণ্টায় তা পরিপূর্ণভাবে জমাট বেঁধে যায়। শনিবার ৭২ ঘণ্টা অতিক্রম হওয়ার পর প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

মাওয়া স্টেশন থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে ২৯ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইনের কাজও শেষ। এ পথেও পরীক্ষামূলক রেল চালানো হবে।

অসীম কুমার তালুকদার বলেন, মঙ্গলবার দুটি এসি চেয়ার, একটি কেবিন, একটা শোভন, দুটো গার্ড রেক এবং একটা পাওয়ার কারের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে বিশেষ এই ট্রেন।

“এগুলোই পাঠানো হচ্ছে সেখানে। কাল সকাল ১০টার আগেই সেগুলো ভাঙ্গা স্টেশনে চলে যাবে। নতুন যে ইঞ্জিন, কোচ আনা হয়েছে এই সুযোগে আমরাও ট্রায়াল করে নিচ্ছি।”

পদ্মা নদীর ওপর সড়ক সেতুর উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ২৫ জুন। দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের প্রথমে যে পরিকল্পনা করা হয়, তাতে রেলের বিষয়টি ছিল না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রেল যুক্ত করা হয়। সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করায় ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল।

প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন তিনি।

আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারে রেল চলাচল করবে। লেভেল ক্রসিংবিহীন এই রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরনো ছয়টি স্টেশন উন্নয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু হয়ে যশোর রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও।

প্রস্তাবিত রুটটি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম দোহাজারি হয়ে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্তে গিয়ে মিশবে। এর আগের ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটে বাংলাদেশের তিনটি রুট সংযুক্ত হয়েছে। রুট তিনটির প্রথমটি গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে দর্শনা-ঈশ্বরদী-জামতৈল-জয়দেবপুর-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারি হয়ে ঘুমধুম সীমান্তে মিশেছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন রেলপথ বদলে দেবে দেশের রেল নেটওয়ার্ক।