সড়কে লাখো ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল করে, সেখানে ওঠে স্লোগান- ‘শেখ হাসিনা পালাইছে’।
Published : 05 Aug 2024, 08:57 PM
ঢাকার বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিন তূর্য। তার কপালে ও পিঠে ছররা গুলি বিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন। তা নিয়ে আক্ষেপ নেই তার। শেখ হাসিনার পতনের আনন্দে ম্লান হয়ে গেছে সেই যন্ত্রণা।
সোমবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকার রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই ছাত্র বলেন, “গতকাল (রোববার) আন্দোলনে গিয়ে ছররা গুলি খেয়ে আজ আবারও এসেছি। গুলি খাইছি তো কী হইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে; এটাই আনন্দের। আমরা এখন স্বাধীন।”
“এই স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়ব। যে বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না।”
ততক্ষণে চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন। সড়কে লাখো ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল করছে। সেখানে ওঠে স্লোগান- শেখ হাসিনা পালাইছে।
এরপর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেনাপ্রধানের ভাষণের পরই উচ্ছ্বসিত ছাত্র-জনতার মিছিলে মিছিলে স্লোগান ছিল, “কী হয়েছে কী হয়েছে, শেখ হাসিনা পালাইছে।”
৩৬ দিন আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ লাভ করল।
এই সময়ে তিন শতাধিক মানুষ সংঘাত-সহিংসতায় নিহত হয়েছেন, কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মিছিলে যোগ দেওয়া হাবিবুর রহমান নামে এক তরুণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিজয় জনগণের বিজয়। এই বিজয়ের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটল। জুলুমশাহীর অবসান ঘটল। দেশ আজ সাধারণ ছাত্র-জনতার নিয়ন্ত্রণে এসেছে।”
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মালিহা তাবাসসুম। মিছিলে শামিল হয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনের পুরো সময় রাজপথে ছিলাম। আজ বিজয়েও আছি। আমাদের এক দফা দাবি পূরণ হয়েছে। এখন একটা সুন্দর দেশ দেখার অপেক্ষায়।”
একই কথা বলেছেন বাড্ডার বাসিন্দা শাজাহান হায়দার। তিনি বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজ আমাকেও এই আন্দোলনে শামিল হতে হল। এটা দুঃখের। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এত বড় স্বৈরাচার হবে, ভাবতে পারিনি। আজ তার পতন হল।
“এই দিন দেখতে চাইনি। কিন্তু যে অন্যায় তিনি নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর করলেন, তার মাশুল তাকে পলায়নের মধ্য দিয়ে দিতে হল।”
ঢাকার মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব শামসুল হক। নাতনিকে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, “এই সরকার ছিল ভুয়া সরকার। আপনি ২০১৪ সাল আর ১৮ সালের নির্বাচন দেখেন। উনি তো অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিলেন। এই পরিণতি তার (শেখ হাসিনা) জন্য অনিবার্য ছিল।”
মহাখালীর আমতলী এলাকায় রিকশাচালক জহিরুল ইসলামকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “এই সরকার ভুয়া সরকার। তারা ছাত্রদের মারছে। এখন নিজেই পলাইছে।”
এদিকে, সরকার পতনের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
ঢাকায় একাত্তর টিভি, সময় টিভি, ডিবিসি নিউজ, এটিএন নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য বঙ্গভবনে আলোচনা চলছে।
এর আগে রয়টার্স জানায়, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে গণভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছান শেখ হাসিনা, তার সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা। সেখান থেকে তারা দিল্লির কাছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। ভারতে আশ্রয় চাননি তিনি।