“এখন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন না হলে অর্থ পাচারসহ নানা ধরনের অনলাইনভিত্তিক অপরাধ বাড়বে। আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি”, বলেন তিনি।
Published : 30 Jun 2024, 08:58 PM
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে তথ্য প্রকাশের পর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইনের তাগিদ দিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এমএফএস ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোতেও এই আইনের আওতায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেছেন, অনলাইন জুয়ার কারণে দেশের বাইরে অর্থপাচারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, “দেশে অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া) নিয়ন্ত্রণের অন্যতম চ্যালেঞ্জ তথ্যের ঘাটতি এবং কোনো গবেষণা ও সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা।
“এখন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন না হলে অর্থ পাচারসহ নানা ধরনের অনলাইনভিত্তিক অপরাধ বাড়বে। আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।”
ইদানীং ফেইসবুক পাতায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ আরও অনেকের অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন ভেসে আসে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের ‘কোনো ব্যক্তির দিকে না গিয়ে’ আইনের মধ্যে থাকতে বলেন।
দেশে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি অনলাইন জুয়ার দল আছে বলেও ধারণা করেন মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি এ নিয়ে গবেষণারও তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, “মানি লন্ডারিং, ই-মানি ট্রানজেকশন, এমএফএস এর অবৈধ ব্যবহার, হুন্ডির কারণে বৈধ রেমিটেন্সে প্রতিবন্ধকতা- এই ধরনের অপরাধের গতিপ্রকৃতি জানা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই ।”
সিআইডি নিজেই এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে এবং সেই গবেষণার আলোকে ‘চ্যালেঞ্জেস অব কন্ট্রোলিং ইল্যিগ্যাল মানি ট্রান্সফার থ্রু মোবাইল অ্যাপস: অ্যা স্টাডি অন অনলাইন গ্যাম্বলিং’ শীর্ষক বইও প্রকাশ করেছে। এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্যই বক্তব্য রাখছিলেন বাহিনীর প্রধান।
তিনি বলেন, “এই ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম।”
অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও। গত ২৪ জুন সচিবালয়ে এক আয়োজন শেষে সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, “মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আমাদের বিভিন্ন বয়সের ছেলে মেয়েরা। এমনকি অনেক বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিও এর মধ্যে আসছেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, ৫০ লাখ মানুষ কীভাবে যেন এই অবৈধ জুয়ার সাইটগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন।”
অবৈধ জুয়ার সাইটগুলোকে ব্লক করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পাশাপাশি একটা সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছি, যাতে সাধারণ মানুষ এ ধরনের কোনো প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত না হন। আমাদের দেশের মুদ্রা যাতে বিদেশে পাচার না হয়।”
মোবাইল অপারেটর ও এমএফএসের জবাবদিহিতা
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মত দেন সিআইডি প্রধান।
তিনি বলেন, “ই-মানিতে টাকার সোর্স কখনো দেখা হয় না। এ বিষয়ে বেশ কিছু মামলা হয়েছে।”
অনলাইনে অর্থ পাচারসহ এসব অপরাধ দমনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, “না হলে পুলিশের একার পক্ষে এসব অপরাধ বন্ধ করা কঠিন।”
পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও এনবিআর থেকে সরিয়ে দেওয়া মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সিআইডি কিছু করছে কি না- জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, “সরকারি কোনো কর্মকর্তা যদি সার্ভিস চলাকালে অপরাধ করেন, এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রয়েছে। এ বিষয়ে এখানে প্রশ্ন না টানাই ভালো।”
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) তানভীর হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান।