“দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দিয়ে সম্পদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়; তার ক্ষেত্রেও সেটি হবে,” বলেন দুদকের এক কর্মকর্তা।
Published : 20 Aug 2024, 10:40 PM
আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের সম্পদের তথ্য খুঁজতে সরকারের ৬৩ সংস্থায় চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ-শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিকানার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থাটির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দিয়ে সম্পদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়; তার ক্ষেত্রেও সেটি হবে।
রোববার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর কথা জানিয়েছিলেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। এর অংশ হিসেবে পরদিন সোমবার দুদকের উপপরিচালক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন মিনহাজ।
দুদকে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারও সম্পদের তথ্য জানতে সরকারের ৬৩ সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে থাকে দুদক। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন কমিশন, আরজেএসসি, সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএতেও চিঠি পাঠায় দুদক।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ। গণআন্দোলনে সরকার পতনের চার দিন আগে গত ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর থেকেই তার হদিস মিলছে না।
ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাওয়ান। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তা দিতে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন রাখেন হারুন। তাদের অ্যাপায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে।
এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে বেদম পিটুনির ঘটনায় আলোচিত হন।
পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি এ জেলার অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনায় আসেন তিনি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়।
ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদন্নোতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।