এরকম কর্মকর্তার সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমান।
Published : 16 Sep 2024, 02:49 PM
আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে গত দেড় দশকে প্রশাসনের আড়াই হাজারের বেশি কর্মকর্তা ‘বঞ্চনার শিকার’ হয়েছেন বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
চাকরিচ্যুত সেইসব কর্মকর্তাদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনা বা তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান।
সোমবার মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাকির আহমেদ খান এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের আরো চার কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
মোখলেসুর রহমান বলেন, “১৬ বছরের বঞ্চনায় যে সমস্ত কর্মকর্তারা বঞ্চিত ছিলেন, তারা মানসিকভাবে নিপীড়িত হয়েছেন, তারা আবেদন করেছে, তাদের বিষয়ে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে।
“জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চাকরিতে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা এবং সেসব নিষ্পত্তির লক্ষ্যে করণীয় ঠিক করাই হবে এই কমিটির কাজ।“
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সমস্যা সমাধানে এই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব।
তিনি বলেন, “কমিটি যেদিন থেকে কাজ শুরু করবে, ওই দিন থেকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশমালা, কেবস টু কেইস, তারা কে কি পদ পাবেন, পদ পাওয়ার পরে আর্থিক সুবিধা কী হবে এসব দেবেন তারা।
“এই কমিটি বঞ্চিত আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে নিয়ে কাজ করবে। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৪ অগাস্টের মধ্যে যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে ফেইস টু ফেইস আলোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। কাকে কোন জায়গায় দেওয়া যায়।
“এটা শুধু যারা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন, চাকরি চলে গেছে তাদের জন্য। যারা চাকরিতে আছেন, তাদের জন্য এটা কোনো বিষয় নয়। এরা নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে, অনেকে আর্থিকভাবে হয়েছেন। এদের বিষয়ে এই সরকার আমাদের বলেছেন অতি দ্রুত এটা করেন।”
মোখলেসুর রহমান বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটির কাজে সহযোগিতা করবে। তারা এই মন্ত্রণালয়ের কোনো একটি একটা কক্ষে বসবেন।
“তাদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তারা একসাথে তিন মাসেও রিপোর্ট দিতে পারবেন অথবা কেস টু কেস রিপোর্টও দিতে পারেবেন।”
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এক মাসের বেশি সময় পার করেছে। এই কদিনে শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনে রদবদল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং গত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এসেছে একের পর এক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, আইন-আদালত, সশস্ত্র বাহিনী, হাসপাতাল ও সেবাখাত, জনপ্রশাসন সব জায়গায় পরিবর্তন অব্যাহত আছে।
সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সরাসরি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে সরকারে পদক্ষেপে প্রশাংসা করে মোখলেসুর রহমান বলেন, “আপনারা জানেন, মাত্র ১৩ দিনে এই সরকার তিনটা স্তরের পদোন্নতি দিয়েছেন, মাত্র ১৩ দিনে। সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ সচিব, উপ সচিব থেকে যুগ্ম সচিব, যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্তি সচিব।
এই পদোন্নতিতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কী না, সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, “পলিসি ইস্যু নিয়ে যে প্রশ্ন, সেটা আমার লেভেলের না, এগুলো আমাকে না করলেই ভালো। প্রথম কথা হল ১৬ বছর তারা কোনো সুযোগই পায়নি। এটাকে যেভাবে ব্যাখা করবেন। আর দ্বিতীয় হল আমরা একটা ফরমেট করেছি, যে যিনি সিনিয়র সহকারী সচিবে ছিলেন, উপ সচিবে ছিলেন, যুগ্ম সচিবে ছিলেন এখানে মাঝখানে জিরো ওয়ার্ক আছে।
“এখানে যেটা করেছি সরকারের এজেন্সি আছে, এনএসআই আছে। ওখান থেকে রিপোর্টে আমরা দেখব যদি কোনো নেগেটিভ কিছু না থাকে, তাদেরকে তো একবারেরই সচিব করা যাবে না। যাদের চাকরি বেশি আছে তাদেরকে যোগ্যতা অনুসারে আর যাদের চাকরি কম আছে, তাদের দেওয়ার মত অনেক পদ আছে।”
কী পরিমাণ আবেদন পড়েছে এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, “আবেদন আড়াই হাজারের উপরে, কোন পদে কতজন এটা এখন বলা যাবে না। আর আবেদনে মূলত দুই তিনটা বিষয় এসেছে, যেমন, আমি নিয়মিত চাকরিতে থাকলে এই পদে যেতে পারতাম, এই পদে আর্থিক বেনিফিট পেতাম, আমি পেনশনে চলে গেছি, পেনশনের সময় আমার পিআরএল এর বেনিফিট বেশি হত।
“এখানে ইন্টিগ্রেটেড সিনিয়রিটির যে পদ পদবি পাবেন, প্লাস এটা তো বলতে হয় না অফিসিয়ালি কে কতটুকু বেনিফিটেড হবে এটা হল লক্ষ্য। আমার ক্ষেত্রেও যদি বলেন, এই আড়াই হাজারের মধ্যে আমিও একজন। আমাকে যে কোন কারণে নিয়ে আসছে। সরকার যদি মনে করে কাউকে কাউকে… ফিট থাকে, রিপোর্ট ঠিক আছে, তাদের সরকার কাজে লাগাবে।”