এটির তথ্য প্রতিটি জেলায় ডিসিদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এই কমিটি তথ্য যাচাই বাছাই শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চূড়ান্ত তালিকা দেবে, সংবাদ সম্মেলনে বলেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটি।
Published : 28 Sep 2024, 09:35 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করছে এ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠনটির স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি; যাতে তাদের সংগ্রহ করা হিসাবে সারাদেশে মোট ১৫৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তালিকার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনকালে ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তবে এটি আরও যাচাই বাছাই করা হবে। এতে আহদের কারও নাম একাধিকার এসেছে আবার কারও নাম যুক্ত হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য সচিব তারেক রেজা বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ব্যক্তিদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় মোট ১,৫৮১ জন ব্যক্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।“
এটিকে প্রাথমিক তালিকা হিসেবে তুলে ধরে তিনি এটির তথ্য আরও যাচাই বাছাই করতে প্রতিটি জেলায় ডিসিদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠানোর কথা বলেন।
”এই কমিটি তথ্য যাচাই বাছাই করার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চূড়ান্ত তালিকা প্রদান করবে।“
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারের তরফে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে যেখানে নিহতের সংখ্যা ৭০৮ জন বলে তুলে ধরা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্ররা যে আন্দোলন শুরু করে তা তীব্রতা পায় জুলাইর মাঝামাঝি সময়ে। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে রংপুরের আবু সাঈদসহ সারাদেশে ছয়জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করে।
এক সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে রূপ নেয়। তীব্র ছাত্র-গণ আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ ঝরে অনেকের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই-আগস্টে নিহত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ অগাস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে।
মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিও নিহত ও আহতদের তালিকা করার কাজ করার কথা আগে জানিয়েছিল।
শনিবার উপ কমিটির প্রণয়ন করা সেই তালিকার প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলন করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক তালিকায় ১৪২৩ মৃত্যু
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ৬৩১, আহত ১৯ হাজারের বেশি
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা শহীদ পরিবারকে ফোন দিয়ে বা সরাসরি যোগাযোগ করে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। তবে এখনও হয়তো আরও অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা শহীদ হলেও তাদের নাম এই তালিকায় আসেনি।
”আমরা জেলা কমিটিগুলোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন প্রতিটি নাম ও তথ্যগুলো ভেরিফাই হয়ে আমাদের হাতে আসে৷”
তারেক রেজা বলেন, তালিকা প্রণয়নের কাজে সহায়তা করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাইসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংস্থা। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিরাও তথ্য দিয়েছে, যা এ তালিকা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চারটি ধাপে তালিকা করতে তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হয়েছে। প্রথমত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা তারা নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আহত ও নিহতদের তথ্য তারা নিয়েছেন।
তৃতীয়ত, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, রেড জুলাই ও ব্র্যাকের মত যেসব প্রতিষ্ঠান চিকিৎসাসেবা ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তাদের থেকে হতাহতদের তালিকা তারা নিয়েছেন।
একই সঙ্গে এমন কিছু গ্রুপ, যারা স্বাধীনভাবে আহত ও নিহতদের নিয়ে কাজ করেছে, তাদের থেকে কমিটি তথ্য নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটির আহ্বায়ক নাহিদা বুশরা, আইটি টিমের ফরহাদ আলম ভূইয়া, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, রেড জুলাই এর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।