আগামী ১২ এপ্রিল বাদীর অবশিষ্ট সাক্ষ্য এবং জেরার জন্য দিন রেখেছেন বিচারক।
Published : 05 Apr 2023, 05:53 PM
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (আগের এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য তৃতীয় দিনেও শেষ হয়নি।
বুধবার সর্বশেষ সাক্ষী হিসেব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এদিন কারাগারে আটক চার আসামি আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। তাই আগামী ১২ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার অবশিষ্ট সাক্ষ্য এবং জেরার জন্য দিন রাখেন বিচারক।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১০৬ জনের মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন হবে। সেদিন আসামিরা নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারবেন। অথবা সাফাই সাক্ষ্য না দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে দেওয়া সাক্ষ্যর প্রেক্ষিতে নিজেদের লিখিত মৌখিক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
পরে হবে দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক এবং সওয়াল জওয়াব। সবশেষে মামলা আসবে রায়ের পর্যায়ে।
মামলাটিতে আসামি পক্ষে লড়ছেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, শাহীনুল ইসলাম অনিসহ কয়েকজন।
আসামিদের মধ্যে পি কে হালদার আছেন ভারতের কারাগারে। তাকেসহ দশজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে।
বাকি নয়জন হলেন: পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
মামলাটি তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধেঅভিযোগ পত্র জমা দেন দুদকের উপ-পরিচালক। এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।
তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজার মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ, যার দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন, যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা।
নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন আটতলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত), যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি, এর বর্তমান দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকারও বেশি।