“বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও আমাদের নারীদের অবদান রয়েছে; আসলে সেই নারীরা কোথায় আছে, কেউ কোথাও দেখতে পারছি না,” বলেন পারভীন আখতার।
Published : 07 Mar 2025, 12:55 PM
ছয় মাসের মাতৃত্ব কল্যাণ ছুটির পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিকসহ একদল নারী।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আলাদা ব্যানারে এসব দাবি তুলে ধরে সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন এবং আওয়াজ ফাউন্ডেশন।
মাথায় বেগুনি ফিতা বেঁধে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারীদের হাতে দাবি-দাওয়া সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
নারীদের হাতে ছিল- ‘ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে’, ‘উই ডিমান্ড সিক্স মান্থ ম্যানার্টিনিটি লিভ’, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা চালু কর’, ‘রেটিফাই আইএলও সি-১৯০’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড।
সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের নেত্রী পারভীন আখতার বলেন, ‘‘নারীদের অধিকার আজও বাস্তবায়ন হয়নি, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক, বেদনার। নারীর অধিকার শুধু মুখে বলা হয়, কোথাও কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
“বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও আমাদের নারীদের অবদান রয়েছে। আসলে সেই নারীরা কোথায় আছে, কেউ কোথাও দেখতে পারছি না।”
পারভীন বলেন, “আমাদের গার্মেন্ট সেক্টরে যেসব নারীরা কাজ করছেন, সেই নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না। গৃহকর্মী- যারা বাসা বাড়িতে কাজ করেন, তাদেরকে কেন আইনের আওতায় আনা হয়নি আজও?
“আমি সরকারের কাছে দাবি করছি, আমাদের নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করতে আইন প্রণয়ন করুন, বাসা-বাড়িতে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য আইন করুন; তাদেরকে সুরক্ষা দিন।”
পোশাক শ্রমিক রেহানা আখতার বলেন, “আমরা আজকে এই রমজান মাসে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি আমার নিরাপত্তার দাবিতে। আপনি দেখুন- আমরা গার্মেন্টস শ্রমিক, আমাদের নিরাপত্তা সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
“মালিকরা বলেন, সরকার বলেন, কত আইন করছে; কিন্তু এখনো নারীদের প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন হচ্ছে। এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই।”
দিলরুবা খাতুন বলেন, “আমরা বারবার বলছি, চিৎকার করে বলছি, ইপিজেড ছাড়া গার্মেন্টস শিল্পে নারী অধিকার নাই, নারী অধিকার দিতে হবে। কিন্তু আসলে এটা বলার মধ্যে থেকে যাচ্ছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না জানি না।
“আজকে ছোট একটা কথা বলি, আজকে আমরা যারা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি…এখানে ৯০% নারী শ্রমিক দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এখানে প্রেস ক্লাবের সামনে, সচিবালয়ের সামনে নারীদের জন্য একটা টয়লেটও নাই। আমরা পুরুষরা সবাই রাস্তার পাশে এদিক-ওদিকে ব্যবহার করতে পারি; কিন্তু নারী শ্রমিক যারা সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে- তার সেই ব্যবস্থা নেই। সরকার কি এগুলো দেখেন না?”
সম্মিলিত পেশাজীবী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২৬ দফা তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি- সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ, কর্মস্থলে শারীরিক, মানসিক, মৌখিক ও যৌথ হয়রানির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা চালু, গৃহকর্মে নিযুক্ত নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন ও হয়রানি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমহারে নারী প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করা, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া, চাকরিহারা নারী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোটের সভাপতি মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও সংহিত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।