গাজীপুর সিটি ভোট: প্রথমার্ধ শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোথাও ধীরগতি

প্রার্থীরা ভোট দিয়ে ভোটের পরিবেশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করলেও ইভিএমে ধীরগতির কথা বলেছেন। একই ধরনের কথা এসেছে অনেক কেন্দ্রের ভোটারদের কাছ থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 07:09 AM
Updated : 25 May 2023, 07:09 AM

কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে শান্তিপূর্ণভাবে; বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ৮টায় এ নগরেরর ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট শুরুর অনেক আগে থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

প্রথম চার ঘণ্টায় কোনো গোলযোগের খবর আসেনি। তবে কোথাও কোথাও এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটকক্ষে অযাচিত লোকের উপস্থিতি, সিসি ক্যামেরা কার্যকর না থাকা আর ইভিএমে জটিলতার অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট দিয়ে ভোটের পরিবেশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করলেও ইভিএমে ধীরগতির কথা বলেছেন। একই ধরনের কথা এসেছে অনেক কেন্দ্রের ভোটারদের কাছ থেকেও।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সার্বিক কারিগরি বিষয় দ্রুত সমাধানের পাশাপাশি অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

টঙ্গী দারুস সালাম কেন্দ্রের এক বুথে ইভিএমের গোলযোগে ভোটগ্রহণ ‍শুরু হয় ৪৩ মিনিট দেরিতে।

ভোট দিতে আসা মো. ইসমাইল বলেন, "সকাল থেকে এসে ভোট দিতে বসে আছি। কিন্তু ভোট দিতে পারছি না। ইভিএম নাকি নষ্ট।"  

ভোটার কৃষ্ণ রায় বলেন, "আমি ৭টায় আসছি ভোট দিতে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাইনে। নাস্তা পানি কিছু খাইনি। অনেক আস্তে আস্তে লাইন যাচ্ছে।”

দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোফাসসেল হক সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বলেন, "এই ভোট শুরু হল। এতক্ষণ মেশিনে সমস্যা ছিল। কী সমস্যা হয়েছে তা টেকনিশিয়ান বলতে পারবে। আমি এটা অপারেট করি কিন্তু টেকনিক্যাল সমস্যা বুঝি না…দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

দারুস সালাম কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. জাকির হাসান তালুকদার বলেন, "আটটা থেকে ভোট শুরু হলেও একটা মেশিনে সমস্যা ছিল। সেটার জন্য ভোটগ্রহণে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে তা খুব বেশি সময়ের জন্য না। আমরা যে মেশিন কাজ করছিল না তা সাথে সাথেই টেকনিক্যাল টিমকে জানিয়েছি। তারা আসতে যেটুকু সময় লেগেছে এই দেরিটুকুই হচ্ছে। এখন পুরোদমে ভোট চলছে। ভোট গ্রহণে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।"

এই কেন্দ্রের এক নম্বর বুথে ভোট শুরুর ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ভোট পড়েছে ২৫টি। ধীরে ভোট পড়ায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটাররা।

সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হলেও ভোর ৬টা থেকেই শুরু হয়েছিল ভোটারদের লাইন। ভোট শুরুর পর লাইন আগাচ্ছিল ধীরগতিতে।  

এই কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সালমা বেগম সাড়ে ৮টা নাগাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের ইভিএম মেশিন ঠিকঠাক কাজ করছে, আঙ্গুলের ছাপও মিলছে। সিসিটিভিতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত একটি ভোট কাস্ট হয়েছে। আরেকজন ভোটের গোপন কক্ষে গেছেন।" 

পাশের এক নম্বর বুথে অবশ্য ততক্ষণে ভোট পড়েছে সাতটি। এ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে মো. আবুল বাশার বলেন, "ভোট দিতে গিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি। নিজের ভোট নিজেই দিয়েছি।"

নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান সকালে টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে নিজের ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করলেও ধীরগতির বিষয়টি তুলে ধরেন।

ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার তার বড় ভাইয়ের ভোগান্তিতে পড়ার কথাও বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী।

সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আজমত উল্লা খান বলেন, “হ্যাঁ, আমার বড় ভাইয়ের আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় তিনি আবার স্মার্টকার্ড আনতে গিয়েছেন। অনেকের কথা শুনেছি। আশা করি, কেন্দ্রের ভেতরে লম্বা লাইন থাকলে সবার ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।”

স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ইভিএমে কোনো অসঙ্গতি তখনও তার চোখে পড়েনি। ভোটগ্রহণ ভেতরে যতটুকু দেখেছেন, সেটা ‘সুষ্ঠু’ মনে হয়েছে।

তবে এজেন্টদের ভয় দেখানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমার অনেক এজেন্ট বাইরে থেকে চলে যাচ্ছে, আসলে তারা ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। এজেন্টদেরকে তিন-চারদিন ধরে ভয় দেখানো হচ্ছে। যারা খুব সাহসিকতা নিয়ে আসছে, তারাই ভেতরে থাকছে।”

গাজীপুরের ভোট নির্বাচন ভবনে বসে সিসি ক্যামেরায় সরাসরি দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান।

শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সিসি ক্যামেরায় দেখছি, শৃঙ্খলার সাথে ভোট হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোটের এ পর্যন্ত (প্রথম আড়াই ঘণ্টা) ভালোভাবেই ভোট হচ্ছে।

“খারাপ কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিচারিক ও নির্বাহী হাকিমরাও খুব তৎপর রয়েছেন, সমন্বয় করে কাজ চলছে।“

সকালে কিছু সিসি ক্যামেরা কাজ না করা, এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ এবং কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ধীরগতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এসব বিষয়ে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।

“ইভিএম কিছু ক্ষেত্রে ননফাংশনাল থাকে, হয়ত কাজ করতে পারে না। কিন্তু ট্রাবলশুট করে সাথে সাথে কার্যকর করা হয়। মেশিন কখনও কাজ না করলে আমাদের কারিগরি লোক সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করে দিচ্ছে ৫/১০ মিনিটের মধ্যে।”

সার্বিকভাবে এখন কোথাও আর তেমন কারিগরি ঝামেলার তথ্য আসছে না বলে দাবি করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

সিসি ক্যামেরা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “কোথাও কোথাও ইন্টারনেট না থাকায় সিসি ক্যামেরায় কাজ করেনি। কিন্তু রেকর্ডিং হচ্ছে, আমাদের কাছে তথ্য থাকছে, ভিডিও ফুটেজ আছে। সকালে ১০/১২টি দেখা যাচ্ছিল না। এখন অনেকগুলোই দেখা যাচ্ছে।“

ভোটের পরিবেশ সার্বিকভাবে ভালো থাকলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, “গ্রেপ্তার এখনও না থাকলেও হয়ত দুচার জনের তথ্য আসতে পারে। মাঠ পর্যায়ের একীভূত তথ্য পাওয়া যাবে, অফিসিয়ালি আমাদের কাছে প্রতিবেদন আসবে। যারা গ্রেপ্তারের মত অপরাধ করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১০১ নম্বর কেন্দ্রে গোপন কক্ষে প্রবেশ এবং ভোটদানে প্রভাবিত করার অভিযোগে রিয়াজ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে আবু তাহের নামে একজনকে তিন দিন আটক রাখার আদেশ দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। ঢাকায় নির্বাচন ভবন থেকে সিসিটিভি দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “অনিয়মের কোনো খবর এখনও পাইনি। পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়নি। কিন্তু জানানো উচিত রিটার্নিং অফিসারের কাছে। যে কোনো অভিযোগ পেলেই খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।”