সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দাবি আদায়ে মাঠে নামার পথ বন্ধ করার সুপারিশও করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
Published : 05 Feb 2025, 09:27 PM
সরকারি চাকরিতে ১৫ বছরের মাথায় সব সুযোগ-সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরের বিধান করার পাশাপাশি ২৫ বছর পূর্ণ হলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিধান বাতিলের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ওই প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
অবসরের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ১৫ বছর চাকরি করার পর সকল সুবিধাসহ অবসর নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হলো। এটি কর্মজীবন পরিবর্তনের জন্য বেছে নেওয়া কর্মকর্তাদের জন্য একটি প্রস্থান পথের সুবিধা দিবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮ এর ধারা ৪৫ বিধান অনুসারে ২৫ বছর চাকরির পরে সরকার ইচ্ছে করলে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারে বলে যে বিধান রয়েছে, তা বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হলো।”
‘নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতে’ এই সুপারিশ করার কথা বলেছে সংস্কার কমিশন।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো অফিসার বা কর্মচারীকে ওএসডি না করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “কোনো ওএসডি কর্মকর্তাকে কাজ না দিয়ে বেতন-ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাময়িকভাবে পদায়ন করা যেতে পারে।”
সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দাবি আদায়ে মাঠে নামার পথ বন্ধ করার সুপারিশও করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
সুপারিশে কমিশন বলছে, “কোনো সরকারি কর্মকর্তা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে।
“বিশেষ করে বিভিন্ন সার্ভিসের নামে যে সকল সমিতি রয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার পরিচয় দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বা দাবি আদায়ের জন্য কোনো বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারবেন না।”
কমিশন বলছে, ব্যক্তি হিসেব কেউ সংক্ষুদ্ধ বা বৈষম্যের শিকার হলে তার প্রতিকারের জন্য তিনি বিধি মোতাবেক আবেদন করতে পারবেন।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর যখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় তখন প্রার্থী মাদকাসক্ত কি না তাও পরীক্ষার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
সরকারি কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে সুপারিশ করে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “সিভিল সার্ভিসে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরপেক্ষভাবে ও সততার সাথে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের চাকুরীর, সামাজিক মর্যাদা, আর্থিক ও জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং তাদেরকে সকল ধরনের হয়রানি হতে রক্ষা করতে হবে।”
এজন্য সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-তে সরকারি কর্মচারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিধান সংযোজন করার কথা বলা হয় সুপারিশে।
মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব পদে সরকারি চাকরিজীবীদের না রাখার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
এর ব্যাখ্যায় কমিশন বলেছে, “অতীতে দেখা গেছে যে, সিভিল সার্ভিসের অনেক অফিসার মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে পরবর্তী সরকারের আমলে হয়রানির শিকার বা পদোন্নতি বঞ্চিত বা ওএসডি হয়েছেন।
“এরূপ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব মন্ত্রীদের অভিপ্রায় অনুসারে সিভিল সার্ভিসের বাইরে থেকে নিয়োগ করা যেতে পারে।”