শিশু প্রহরে বরাবরের মত শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বইমেলার শিশুচত্বর। জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, সিকু আর টুকটুকিদের সঙ্গে নেচে-গেয়ে সময় কাটিয়েছে তারা। পরে বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাদের।
মেলা ঘুরে দেখা গেল, এবার বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার ও রূপকথার বই আগ্রহ জাগাচ্ছে শিশু-কিশোরদের।
দোকানিরা জানান, শিশুদের পছন্দের বইয়ের তালিকায় রূপকথার পাশাপাশি ভূতের গল্পের বই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। অপরদিকে বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (সায়েন্স ফিকশন), থ্রিলার বইয়ে আগ্রহ বেশি কিশোরদের।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান কৌশিক বইমেলা থেকে কিনেছেন ‘সেরা বিজ্ঞানের সেরা আবিষ্কার’।
কথায় কথায় সে জানাল, বড় হয়ে সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করতে চায়। পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্পের ছলে বিজ্ঞান শিখতে তার অনেক ভালো লাগে।
তার মা ফাইজা সুলতানা বলেন,“ শিশুদের চিন্তা শক্তি বিকাশ করতে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও কিছু বই পড়তে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে বিজ্ঞানকে সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমন বই তাদের হাতে তুলে দিলে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।”
ফার্মগেটে অবস্থিত গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশফাকুল তাহমিদ কিনেছেন সায়েন্স ফিকশন বই ‘প্ল্যান চ্যাট’।
সে জানাল, সায়েন্স ফিকশন তোর খুব ভালো লাগে। কারণ গল্পগুলো থেকে বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানা যায়।
বাবা জহিরুল ইসলামের সঙ্গে বইমেলায় আসেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী লানিকা। সে কিনেছে থ্রিলার বই ‘গোয়েন্দা আঙ্কেল’।
জহিরুল বলেন, পাঠ্যবই পড়তে শিশুদের অনেক সময় ক্লান্তি আসে। তখন এই ধরনের বই তাদের পড়তে দিলে তারা আনন্দ পাবে। তাই ছোটদের থ্রিলার বই কিনে দেন তিনি।
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ান ইসলাম কিনেছে ‘আট দেশের রূপকথা’ ও ‘ঈশপের গল্প’।
তার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “রূপকথার গল্প শিশুদের বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। তাদের হাতে মোবাইল তুলে না দিয়ে এ ধরনের বই তুলে দিলে তারা পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হবে।”
এদিকে বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায় মেলায় আসা শিশু কিশোররা নিজে থেকেই বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার ও রূপকথার বই খুঁজছে।
বাবুই প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আইরিন সুলতানা বলেন, আমাদের স্টলে বিজ্ঞান , সায়েন্স ফিকশন ও থ্রিলার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবার মেলায় ভালো সাড়া পাচ্ছি।
চিলড্রেন বুক কালেকশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার দাশ বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ের চাহিদা অনেক। কিন্তু স্টলগুলোতে এসব বই খুব বেশি নেই।
শিশু গ্রন্থ কুটিরের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন, ভূতের বই, ঈশপের গল্প, নলেজ ব্যাংক ও রূপকথার গল্প বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলা একাডেমির শিশু-কিশোর প্রকাশনা স্টলের বিক্রয়কর্মী শিল্পী রাণী মারমা জানান, তারা রূপকথার বই বেশি বিক্রি করছেন। তবে শিশুদের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক বই দেখাতে পারেননি তিনি।
নানা অনুষ্ঠান
শনিবার অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিনে মেলা শিশু প্রহর দিয়ে শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ১৭০টি।
এদিন সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক শাখায় প্রথম হয়েছেন নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, দ্বিতীয় অন্বেষা মজুমদার এবং তৃতীয় হয়েছেন সার্থক সাহা। খ শাখায় প্রথম হয়েছেন রোদোসী নূর সিদ্দিকী, দ্বিতীয় তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় এবং তৃতীয় হয়েছেন মৈত্রেয়ৗ ঘোষ। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শিল্পী মাহমুদ সেলিম, সুজিত মোস্তফা ও চন্দনা মজুমদার।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবনচর্যার সঙ্গে বিনয় ও স্বচ্ছতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। তিনি যেমন এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করেছেন, তেমনি নিজের শিক্ষাদর্শনটিও তুলে ধরেছেন। যে শিক্ষা আমাদের জীবনকে বহুমাত্রিক করবে, এমন শিক্ষার কথাই তিনি ভেবেছেন।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ওবায়েদ আকাশ, রনজু রাইম, ফারুক সুমন ও হক ফারুক আহমেদ।
রোববার যা থাকছে
এদিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে গোবিন্দচন্দ্র দেব এবং ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গাজী আজিজুর রহমান ও আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন খান মাহবুব, হাসান অরিন্দম, শিহাব শাহরিয়ার, পাপড়ি রহমান ও রাজীব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করবেন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।