তিস্তার পানি ‘প্রত্যাহারের উদ্যোগ’: দিল্লিকে চিঠি দেবে ঢাকা

ভারতীয় পত্রিকার খবর, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 02:17 PM
Updated : 16 March 2023, 02:17 PM

তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন দুই খাল খননের উদ্যোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। 

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা কলকাতায় একটা পেপারে আসার পরে, সেটার উপরে বাংলাদেশের মিডিয়া একটা নিউজ করেছে। 

“সেটার পরে জেআরসিকে (যৌথ নদী কমিশন) আমি বলেছি, জেআরসি মেম্বারকে চিঠি দেওয়ার জন্য তার কাউন্টার পার্টকে, যে তারা অফিসিয়ালি আমাদেরকে বলুক। আমরা মিডিয়ায় পেয়েছি, সেখানে এটা কতটা নির্ভরশীল সেটাতো আমরা জানি না।” 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা এটার উপর কমেন্ট করব না। আমরা যেটা করতে চাচ্ছি যে, আমরা একটা চিঠি তাদেরকে দিচ্ছি। সেই চিঠিটার উত্তর এলে পরে আমরা বুঝতে পারব, সত্যি তারা ডাইভার্ট করতেছে কি, করতেছে না।” 

গত শনিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফের এক খবরে বলা হয়, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ। গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। 

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি যেখানে ঝুলে আছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন উদ্যোগের ফল কী হতে পারে সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। 

জাতিসংঘ পানি সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে পশ্চিমবঙ্গের ওই উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। 

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “চিঠি অলরেডি ড্রাফট রেডি হয়ে আছে। আমি সময়ের জন্য সাইন করতে পারি নাই। আজকে সাইন করব। … চিঠিটাতো দেখে সাইন করতে হবে।” 

চিঠিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানানো হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “জানতে চাওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি। আমাদের জেআরসি থেকে আমরা চিঠি দেব।” 

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় ইনসিস্ট করি, বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে, সুসম্পর্ক আছে। কিছু যদি না হয়, আমাদের অপশনতো আছেই। অপশনটা কী সেটাতো আমি আপনাদের বলতে পারব না।” 

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল। 

মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। 

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।

যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী সভার আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রীকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। 

তিনি বলেন, ঢাকায় আহ্বান অনুসারে এই মাসে কিংবা পরবর্তী মাসে জেআরসি সভার বিষয়ে ভারত ‘মৌখিক প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে। 

সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে জেআরসির বৈঠক হবে কি-না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেহেতু তিনি আমাকে মৌখিকভাবে কথা দিয়েছেন, সেজন্য আমরা আশা করতে পারি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) যাওয়ার আগে জেআরসি মিটিং একটা হবে।” 

এদিকে তিস্তা নদীর পানি সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে সরকার প্রতিবাদ জানিয়েছে কি-না, বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীনকে। 

উত্তরে তিনি বলেন, “তিস্তা সংক্রান্ত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিস্তা নদীর পানির ওপর আমাদের বাংলাদেশের বৃহৎ জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে। সে কারণে অনেক বছর ধরে আমরা তিস্তা নিয়ে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। 

“খাল খননের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং আলোচনা করছে।” 

তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আমরা খবরটির সত্যতা যাচাই করছি। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক, সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে অব্যাহত চেষ্টা রাখব। আমরা আশা রাখছি, আলোচনার মাধ্যমে আমরা এ সমস্যাটির সমাধানে যাব।” 

দি্ল্লির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে সেহেলী সাবরীন বলেন, “এটা তো পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং যৌথ নদী কমিশনের সঙ্গে সম্পক্ত। 

“আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব বা পেপার ঠিক করে ভারতীয় পক্ষের কাছে জানতে চাইব। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”