কলা গাছ অভিযানে ‘পাগল’ করছেন মেয়র আতিক

পানি নিষ্কাশন নালা ও লেকে পয়োবর্জ্য ফেলা বন্ধে অদ্ভুত এক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2023, 03:11 PM
Updated : 4 Jan 2023, 03:11 PM

গুলশানে পানি নিষ্কাশন নালা ও লেকে পয়োবর্জ্য ফেলা বন্ধে অদ্ভুত এক পদক্ষেপ নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

যে বাড়ি থেকে পয়োবর্জ্য যে পাইপে আসছে, সেগুলোর বাইরের দিকের মুখ কলা গাছ দিয়ে আটকে দিচ্ছেন তিনি।

এতে ফল পাচ্ছেন জানিয়ে আতিক বলেছেন, “যে কয়েকটা বাড়ির সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়েছি, তারা এখন পাগল হয়ে গেছে।”

বুধবার গুলশান-২ এর একটি বাসার সুয়ারেজ পাইপ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে এই অভিযান শুরুর পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের প্রায় ৮৫ শতাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি লেকে পড়ছে জানিয়ে তা বন্ধে ভবন মালিকদের হুঁশিয়ার করে আসছিলেন আতিক।

তিনি বলেছিলেন, সারফেস ড্রেনে (পনি নিষ্কাশনের নর্দমা), খালে ও লেকে ভবনের পয়োবর্জ্যের সংযোগ পেলে আর ছাড় দেওয়া হবে না।

বুধবার সরাসরি অভিযানে নামেন মেয়র, যা শুরু হয় গুলশান-২ এর একটি বাসার সুয়ারেজ পাইপ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে।

অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম এবং স্থানীয় কাউন্সিলররা।

মেয়র আতিক বলেন, “এই বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই বার বার সচেতন করে আসছি। গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। সোসাইটির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে আমরা জানিয়েছি যেন পয়োবর্জ্যের লাইন সারফেস ড্রেনে না দেওয়া হয়। বার বার বলার পরেও কেউ কর্ণপাত করছে না।

“সারফেস ড্রেনে, খালে বা লেকে পয়োবর্জ্যের সংযোগ দেওয়া বন্ধ করতে আজ থেকে আমরা এই অভিযান শুরু করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

গুলশান, বনানী, বাড়িধারা ও নিকেতন এলাকায় প্রায় ৮৫ শতাংশ বাড়িতেই পয়োবর্জ্যের লাইন সারফেস ড্রেনে দিয়ে রাখা বলে জানান তিনি।

“এমনকি অনেকে চোরাই পথে সারফেস ড্রেনে পয়োবর্জ্যের লাইন দিয়েছে। আমরা অভিজাত চারটি এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টা বাড়িতে জরিপ করেছি। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি পড়ছে লেকে অথবা ড্রেনে।”

ভবনগুলোর তালিকা ধরে ‘কলা গাছ অভিযান’ চলবে জানিয়ে আতিক বলেন, “সারফেস ড্রেনে ও খালে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ পেলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। কোনোভাবেই ব্ল্যাক ওয়াটার সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে, খালে, লেকে ঢুকতে পারবে না।”

অভিযান পরিচালনার আগে ভবন মালিকদের অনেক সময় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বারিধারায় ৫৫০টা বাড়ির মধ্যে ৫টা বাড়িতে সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। লেকে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। মশা নিধনে নেচারাল সলিউশন সম্ভব হচ্ছে না মাছ চাষ করতে না পারার কারণে।

“গুলশান সোসাইটির নব নির্বাচিত কমিটি আমার কাছে এসেছে, তারা সময় চেয়েছে ৩ মাস। আমি তাদের ৬ মাস সময় দিয়েছি।”

উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে নিজের বাড়িতে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়েছেন বলে জানান এক সময়ের বিজিএমইএ সভাপতি আতিক।

আবাসিক এলাকাগুলোতে স্যুয়ারেজ লাইন নিয়ে জরিপ কাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, “গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের সব প্লটে আমরা জরিপ পরিচালনা করেছি। বেশিরভাগ বাড়িতে সুয়ারেজ লাইন নেই। সরাসরি সাধারণ পানির লাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“ঢাকা ওয়াসা গুলশান-বনানীর ৫২ শতাংশ বাড়ি থেকে সুয়ারেজ বিল নেয়। পয়োবর্জ্যের বিল নিচ্ছে, কিন্তু সুয়ারেজ সিস্টেম অধিকাংশ জায়গায় কাজ করছে না। ঢাকা ওয়াসার নিজেরই যাচাই করা উচিত, তাদের সুয়ারেজ লাইন ফাংশনাল (কাজ করছে) কিনা।”

ওয়াসা বিল নিচ্ছে, সেবা দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে মেয়র আতিক বলেন, “ওয়াসাকে বলছি, আপনারা যাচাই করুন, যে বিল নিচ্ছেন, সেবা দিচ্ছেন তো। জরিপের ফলাফল আমি অফিশিয়ালি ওয়াসাকে জানাব।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদ এলাহী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জরিপের প্রতিবেদন আমি দেখেনি। তাই এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমি যতটুকু জানি, গুলশান-বনানীর শতভাগ বাড়িতে সুয়ারেজ লাইন রয়েছে। এখানের পয়োবর্জ্য পাগলা শোধনাগারে যাচ্ছে। আমরা যেখানে সেবা দিচ্ছি, সেখান থেকে বিল আদায় করছি।”