কুমিল্লা মেডিকেলের সাবেক ছাত্রকে তুলে নিয়ে গেছে সিআইডি পরিচয়ধারীরা

রামপুরা থানার ওসির ভাষ্য, ‘সরকারি লোকজনই’ শাকির বিন ওয়ালিকে নিয়ে গেছে বলে তারা ‘শুনেছেন’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2022, 09:24 AM
Updated : 13 Sept 2022, 09:24 AM

ঢাকার রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ায় এক চিকিৎসককে তার বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ নিয়ে যাওয়ার পর তার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। 

শাকির বিন ওয়ালি নামের ওই তরুণ চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন। আসছে জানুয়ারিতে এফসিপিএস পরীক্ষার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। 

শাকিরের বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ এ কে এম ওয়ালিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার বেলা ৩টার দিকে সাধারণ পোশাকে কিছু লোক তাদের বাসায় গিয়ে ‘সিআইডি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে শাকিরকে নিয়ে যায়।

“বাসায় তখন শাকিরের মা, তার স্ত্রী আর বাচ্চারা ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি সন্ধ্যায় রামপুরা থানায় গিয়েছিলাম, কিন্তু থানা জিডি নেয়নি। থানা থেকে বলেছে, রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থা শাকিরকে নিয়ে গেছে বলে তারা শুনেছে। হয়ত তথ্য জানা শেষ হলে ফেরত দিয়ে যাবে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থানায় কোনো জিডি হয়নি। তার বাবা থানায় এসেছিলেন, তারা জানিয়েছেন সরকারি লোকজন পরিচয়ে ধরে নিয়ে যেতে পারে। সম্ভবত জঙ্গিবাদী কোনো যোগাযোগের বিষয়ে যাচাই বাছাই করার জন্য সরকারি লোকজন তাকে নিয়ে গেছে। আমরা এ ধরনের ঘটনা শুনেছি।” 

তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ‘অবগত নন’। 

“এটা হওয়ার কথা নয়, সিআইডি কোনো অপারেশন করতে গেলে জানিয়ে যাওয়ার কথা।” 

শাকিরের বাবা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, রোববার রাত ১০টার দিকে সিআইডি পরিচয় দেওয়া সেই লোকগুলো আবারও তাদের বাসায় গিয়েছিলেন। সে সময় বাসায় শাকিরের একজন মামা ছিলেন। তার কাছে তারা তাদের পরিচয় দিয়েছেন, তবে নাম বা কোনো নম্বর দেননি।

“তারা শাকিরের মামাকে শান্তভাবে বলেছেন, ‘আপনার ভাগ্নে আমাদের হেফাজতে আছে। আমরা কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করছি। তথ্য জানতে পারলে ফেরত দিয়ে যাব।’ এরপর লোকগুলো শাকিরের ঘর থেকে তার একটি মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়।” 

সোমবার আবারও রামপুরা থানায় যাওয়ার কথা জানিয়ে চিকিৎসক ওয়ালি উল্লাহ বলেন, “তারা আমার জিডিও নিল না, আবারও আমাকে বলল, ‘আপনি নিশ্চিত থাকেন, কোনো না কোনো এজেন্সির কাছে আছে আপনার ছেলে।’ আমিও ধরে নিচ্ছি শাকির সিআইডির কাছেই আছে, যেহেতু দুই দুইবার বাসায় আসছে। আইনে তো গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বিধান আছে বলে শুনেছি।“ 

চিকিৎসক ওয়ালি উল্লাহ জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি চার বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ১৯৯৫ সালে রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়া এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। 

তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাকির দ্বিতীয়। শাকিরের স্ত্রীও চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ছেন। তাদের দুই ছেলে মেয়ে। শাকিরের বড় সন্তান দেড় বছরের, আর ছোটটির জন্ম কয়েক দিন আগে। 

ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “আমার ছেলে যদি কোনো অন্যায় কাজ করে, প্রচলিত আইনে তার বিচার হোক। তাকে যেন গুম করে না রাখা হয়। সরকারের কাছে এ বিষয়ে জোর দাবি জানাচ্ছি।”