গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জমি খুঁজে দিতে বললেন মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী।
Published : 08 Jun 2024, 08:37 PM
প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২১ জন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেছে আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন। একই সঙ্গে স্কুলটির জন্য স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ পেতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে স্কুলটির সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার ঢাকার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজন করে আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন।
এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাজনীতিবিদ মোজাফফর হোসেন পল্টু। প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আবদুস সামাদ ফারুক।
কালজয়ী 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানের সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের আদর্শে উজ্জীবিত স্কুল ‘আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন’।
স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে ঢাকার মালিবাগে একটি দ্বিতল বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই বাড়িটিরই নিচতলায় কামাল লোহানীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেন এই গানের স্কুলটি।
১৯৮২ সালে আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে বাড়িটি থেকে উচ্ছেদ করা হলে স্কুলটির কার্যক্রমও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন স্কুলটির পাশে দাঁড়ায় খিলগাঁও এর পল্লীমা সংসদ সমাজকল্যাণ, শিক্ষা ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে সেখানেই স্কুলটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় আলতাফ মাহমুদের সুর করা সেই কালজয়ী 'একুশের গান' পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাগত বক্তব্য দেন আসাদুর রহমান নাসিম।
আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতনের নির্বাহী সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, "ছায়ানটের আদলে আমরা আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন করতে চাই। এর জন্য রাষ্ট্রের কাছে আমরা সহযোগিতা চাই। আমাদের এখানে মাননীয় মন্ত্রী উপস্থিত আছেন। আমরা আশা করব তিনি আমাদের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ দেবেন।"
পরে সংগীত বিদ্যানিকেতনকে জমি খুঁজতে বলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
তিনি বলেন, "আলতাফ মাহমুদের সুর করা সেই বিখ্যাত গানটি আমাদের বেড়া উঠার অংশ হয়ে আছে। আমরা গানটি গেয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করি। আপনারা আমাকে একটা জায়গা খুঁজে দেন, যেটি আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে। আমি সেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমার এখতিয়ারের মধ্যে হলে, আমি সেটি অবশ্যই করব।"
আলতাফ মাহমুদের পরিবারকে বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, "যখন উচ্ছেদ করা হয়, তখন পত্রিকায় সেই খবর পড়েছিলাম। আমরা তখন প্রতিরোধ করার মত অবস্থায় ছিলাম না। এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সরকার ক্ষমতায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায়। এটি এখন আমরা দেখতে পারি।
“বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ দেওয়া একটি বাড়ি থেকে একটা শহীদ পরিবারকে কেন উচ্ছেদ করা হয়েছিল, সেই বাড়িটি কারা দখল নিয়েছিল- তা খুঁজে দেখা উচিত। আপনারা আমার সঙ্গে দেখা করুন, আমি অবশ্যই সেটি দেখব।"
'সৃজনের দ্রোহে মানবের তরে'- প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, "আলতাফ মাহমুদ যা বিশ্বাস করতেন তিনি তা শিল্পে প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধে তিনি জীবন দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন।
"পৃথিবীর ইতিহাসে দুজন মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, একজন ভিক্টর জারা এবং অন্যজন আলতাফ মাহমুদ। দুজনই মানুষের জন্য গান করেছেন, মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন।"
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন ম হামিদ। পরে মঞ্চে অতিথিরা ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। প্রয়াত গুণিজনদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা সম্মাননা গ্রহণ করেন।
সম্মাননা পেয়েছেন সুরকার ও গণসংগীত শিল্পী শেষ লুৎফর রহমান, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, সুরকার ও গণসংগীত শিল্পী আবদুল লতিফ, নজরুল গবেষক আসাদুল হক, গণসংগীত শিল্পী সুখেন্দু চক্রবর্তী, সংগীতজ্ঞ ও নজরুল সুধীন দাস, ভাষা সৈনিক ও গণসংগীত শিল্পী নিজাম উল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হক, ভাষা সৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগীত পরিচালক অজিত রায়, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সাধন রঞ্জন ঘোষ, গীতিকার ও সুরকার নজরুল ইসলাম বাবু, চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগীত শিল্পী আজম খান, সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দিন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নজরুল সঙ্গীত শিল্পী শাহীন সামাদ, গণসংগীত শিল্পী মালা খুররম, নজরুল সংগীত শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, লোক সংগীত শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া, এবং পল্লীমা সংসদ সমাজকল্যাণ, শিক্ষা ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান।
অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকেন চিত্রশিল্পী শাকিলা খান চয়ন। তিনি ছবিটি প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "১৯৭২ সালের ২৩ ডিসেম্বর আলতাফ মাহমুদ বিদ্যানিকেতন প্রতিষ্ঠা হয়। সে হিসাবে ৫২ বছর হয়েছে স্কুলটির। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতেই এই অনুষ্ঠান করা হয়েছে।"