১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সরকারের সাড়া না পেলে হাই কোর্টের যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন একদল আইনজীবী।
Published : 22 Jan 2023, 09:39 PM
ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে সরকারকে আইনি নোটিস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একদল আইনজীবী।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশের মহা পরিদর্শক এবং কারা মহাপরিদর্শকের কাছে ডাকে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নোটিসদাতাদের একজন আসাদ উদ্দিন।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, “আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে নোটিস পাঠিয়েছি ডাক যোগে। ওই নোটিসে সব কিছুর ব্যাখ্যা আছে।”
নোটিসে আইনজীবীরা ১৫ কর্মদিবসের সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন, তা না হলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নোটিস পাঠানো আইনজীবীরা হলেন- আসাদ উদ্দিন, মীর এ কে এম নুরুন্নবী, জোবায়দুর রহমান, মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, আশরাফুল ইসলাম ও শাহীনুর রহমান।
সম্প্রতি প্যারোলে মুক্ত কয়েক আসামিকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানোর ঘটনায় সমালোচনার মধ্যে আইনজীবীরা এই আইনি নোটিস দিলেন।
এতে বলা হয়, “বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধু পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন, তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ নিষেধ করা হয়েছে।
“যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সংহিস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এই প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।”
আইনজীবীরা নোটিসে বলেছেন, “ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার শুধু জেল কোড ও কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবল হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ডান্ডা বেড়ি নয়।
“যেসব কয়েদি পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে হাতকড়া বা ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্র বিশেষে এটা করা যাবে পারে।”
অ্যাডভোকেট আসাদ জানান, “সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি করা নিষিদ্ধ।
“অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না বা তার সঙ্গে এই ধরনের কোনো ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনের এসব বিধানের বাইরে গিয়ে ডাণ্ডাবেড়ি এবং হাতকড়ার অপব্যবহার করা হচ্ছে যা নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর ও তাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।”
তিনি বলেন, “গত ১০ ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিকে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যাতে দেখা যায় গাজীপুরের একজন আসামি ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন।
“১৭ জানুয়ারি আরেকটি সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যাতে দেখা যায়, শরীয়তপুরে একইভাবে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। শুধু তাই না, এই সময়ের মধ্যে একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে ঢাকা কোর্টে আনা হয় এবং আরেক আইনজীবীকে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে কোর্টে আনা হয়। এসব ঘটনা পত্রিকা, গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।”
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশু আসামিকেও হাতকড়া পরানোর ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।