Published : 23 Dec 2024, 01:21 PM
দেড় দশক আগে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠনে সরকারপ্রধানের সায় মিলছে।
বিজিবি দিবস উপলক্ষে সোমবার পিলখানায় অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রাতে (রোববার) কমিশন গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন।"
সাত সদস্যের এ কমিশনে বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমানকে প্রধান করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া সামরিক বাহিনীর দুজন, সিভিল সার্ভিসের একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এবং পুলিশের শীর্ষ এক শীর্ষ কর্মকর্তা কমিশনে থাকছেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। ওই ঘটনার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। কিন্তু ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান গত ১৫ ডিসেম্বর আদালতকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলার শুনানি চলছে আপিল বিভাগে। বিস্ফোরক মামলার শুনানি জজ আদালতে চলমান। তাই রিট আবেদনকারীর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাবিত কমিটি গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না।