বাংলাদেশের সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী হিসেবেও আদালতে দাঁড়িয়েছেন।
Published : 20 Dec 2024, 04:53 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, প্রবীণ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর
শুক্রবার বিকালে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে তার ছেলে মোয়াজ আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে মন্ত্রী মর্যাদায় ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এ এফ হাসান আরিফ।
বাংলাদেশের সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী হিসেবেও আদালতে দাঁড়িয়েছেন।
ল্যাবএইডের জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের এ খোদা জানান, বিকাল ৩টার দিকে পরিবারের সদস্যরা উপদেষ্টা হাসান আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
“স্বজনরা বলেছেন, উনি ভাত খাচ্ছিলেন, তার মধ্যেই পড়ে যান। এখানে আনা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনটা ৩৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আসলে তাকে আমরা মৃত অবস্থাতেই পেয়েছি। তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল।"
হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে আইনজীবী হিসেবে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “হাসান আরিফ একজন উজ্জ্বল আইনজীবী হিসেবে এবং ভিন্নমতাবলম্বী, ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও আমাদের সমাজের প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক শোকবার্তায় বলা হয়, কায়রোতে ডি এইট সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে শুক্রবার বিকেলে দেশে পৌঁছানোর পরপরই হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন ইউনূস।
প্রয়াত উপদেষ্টার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকে তিনি ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক শোক বার্তায় বলেন, হাসান আরিফের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক ‘অপূরণীয় ক্ষতি’।
রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদও। তিনি বলেছেন, প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ‘আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে’ হারাল।
১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় হাসান আরিফের জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি করেন।
১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী ছিলেন ‘এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ চেম্বারের প্রধান।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৫ সালের অগাস্ট পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
পরে ১৯৮৫ সালের অগাস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের একজন প্যানেল সদস্য ছিলেন তিনি।
শুক্রবার এশার নামাজের পর ধানমন্ডি ‘সাত মসজিদে’ হাসান আরিফের জানাজা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, আইনজীবী এবং স্বজনরা জানাজায় অংশ নেন।
শনিবার হাসান আরিফের কফিন নেওয়া হবে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে। সেখানে আরেক দফা জানাজার পাশাপাশি তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন বিচার অঙ্গনের সহকর্মীরা।
তাকে কোথায় সমাহিত করা হবে, সে সিদ্ধান্ত হবে বিদেশে থাকা মেয়ে দেশে ফেরার পর।