“যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই।”
Published : 03 Feb 2025, 09:58 PM
ছাত্র-জনতার গণভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ‘ভুল’ তথ্য ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
একই সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে ঐক্য পরিষদকে আরও বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরেন শফিকুল আলম। এরপর এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার।
তুমুল আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন, বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনার খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন’।
ঐক্য পরিষদের এই দাবি সঠিক নয় দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সংহিসতায় নিহত দাবি করা ২৩টি ঘটনার বাস্তব কারণ জানতে অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সেই ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে।
“ওই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।”
উপপ্রেস সচিব বলেন, ওই ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া পায়নি পুলিশ।
তিনি বলেন, “যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই।”
এসব ঘটনার ফিরিস্তি তুলে ধরে আজাদ মজুমদার বলেন, “হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটি ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যু এবং বিরূপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামরি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু, একটি আত্মহত্যার ঘটনা।”
তিনি বলেন, একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই বলে পুলিশ সরকারকে জানিয়েছে।
“এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান।”
এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে তুলে ধরে আজাদ মজুমদার বলেন, এই ২৩ ঘটনার দুটোতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটি মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশের তদন্তে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আলামত পাওয়া যায়নি দাবি করে উপপ্রেস সচিব বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে।
“এই ধরনের ‘বিভ্রান্তিমূলক’ প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।”
ঐক্য পরিষদের এ ধরনের ‘মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া’ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র কি না জানতে চাইলে উপপ্রেস সচিব বলেন, “সাম্প্রাদায়িক সহিংসতার ঘটনা পুলিশ যেভাবে তদন্ত করে এসব ঘটনার তদন্ত ওইভাবে করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত করে দেখা হোক সাম্প্রদিক সহিংসতা আছে কি না।”
পরবর্তী সময় বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখার জন্য ঐক্য পরিষদকে আহ্বান করেছি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা বলেছে, বেশিরভাগ তথ্য গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। আমরা খতিয়ে দেখিয়েছি কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনাগুলোকে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করা হয়নি, সেটাকে জেনারেল ক্রাইম হিসেবে দেখা হয়েছে।
“তাদের কাছে আহ্বান, তারা যেন নিবিড়ভাবে দেখে প্রকৃত সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরে।”