“কীভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায়, আমরা চেষ্টা করছি,” বলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।
Published : 30 Dec 2024, 06:55 PM
ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে নতুন নতুন আসামি ও বিচারপ্রার্থীও বেড়েছে, কিন্তু ঢাকার আদালতপাড়ার ভোগান্তির চিত্র খুব একটা বদলায়নি।
যেখানে হাজার হাজার লোকের আসা যাওয়া সেই জেলা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ও মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বসার ব্যবস্থা নেই।
দূর-দূরান্ত থেকে যারা বিচারের জন্য আসেন, দিনভর তাদের অপেক্ষা করতে হয় আদালত চত্বরে, গাছতলা কিংবা ফুটপাতে।
এছাড়া প্রত্যেক এজলাসের বাইরে বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই। কিছু জায়গায় বসার বেঞ্চ থাকলেও সেগুলো ভেঙে গেছে। তাই বিচারপ্রার্থীদের বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয়। তাদের জন্য নেই শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
নারী ও শিশু বিচারপ্রার্থীদের জন্য রেবতী ম্যানসনে একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সেখানে স্বল্পসংখ্যক লোকের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। ন্যায়কুঞ্জ নামে আরেকটি বিশ্রামাগার করা হয়েছে। মাসখানেক আগে উদ্বোধন হলেও এটি এখনো চালু করা হয়নি।
আল আমিন নামের এক বিচারপ্রার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটু বসার সুযোগ নেই। আদালতে বিচার চাইতে আসা আরেক ভোগান্তি। এজলাসে আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা নেই।”
এসব সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার সংকটের কথা বলছেন আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, এর মধ্যে থেকে যেসব সমস্যা সমাধান করা যায় সেগুলো করার চেষ্টা করছেন তারা।
আদালতপাড়ায় গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক মাসুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারপ্রার্থীরা যেন সুপেয় পানি পায় সেজন্য আমরা প্রতিটা ফ্লোরে একটি করে ফিল্টার লাগানোর পরিকল্পনা করছি।
“পাশাপাশি আদালতে টয়লেটগুলো নতুন করে মেরামত করা হবে, ইতোমধ্যে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। জেলা জজ ও মহানগর আদালতের ভবনে আধুনিক টয়লেট করা হবে।”
বিচারপ্রার্থীদের বসার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করি, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আদালতের অনেক সমস্যা সমাধান হবে।
“ইতোমধ্যে মহানগর ও জেলা জজ আদালতে কিছু বেঞ্চ দিয়েছি বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য। সিএমএম আদালতেও দেব। তাছাড়া শুধু ন্যায়কুঞ্জ দিয়ে হবে না, আমরা বাগানের রেলিং টাইলস করে দেব, যেন বিচারপ্রার্থীরা বসতে পারেন।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধন করা হয়েছে। শিগগিরই চালু হচ্ছে। আমাদের আদালতে জায়গা সংকট। তাও কীভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায়, আমরা চেষ্টা করছি।”
ঢাকার আদালত পাড়ায় ১১৮টি আদালতের মধ্যে ঢাকা জেলা ও দায়রা এবং বিচারিক হাকিম আদালত ৪০টি। ঢাকার মহানগর ও দায়রা জজ আদালত ১৬টি। মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত ৩৪টি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৯টি। সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল ১টি। সাইবার আদালত ১টি। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ১টি। বিশেষ জজ আদালত ১০টি। পরিবেশ আদালত ২টি। এছাড়াও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে ৪টি।
ন্যায়কুঞ্জে যা আছে
২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ঢাকা জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ন্যায়কুঞ্জ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক প্রধান বিচরিপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। পরবর্তী সময় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ মো হেলাল উদ্দিন চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন করা হলেও ন্যায়কুঞ্জ এখনো চালু হয়নি। এখানে ৭২ জনের বসার জায়গা, ব্রেস্টফিডিং রুম, আর একটি ফাস্টফুডের দোকান ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্ত এখানে কোন শৌচাগার নেই।
এ বিষয়ে আদালতে গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক মাসুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানে শৌচাগার হওয়ার কথা ছিল। নকশাতেও ছিল। আশেপাশে অফিস রয়েছে ক্যাফে থাকবে, তাই জেলা জজের পরামর্শে তা বতিল করা হয়। ন্যায়কুঞ্জের জন্য আলাদা শৌচাগার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে ক্যাফে থাকবে তাই আমরা টয়লেট রাখিনি। এখানে বিচারপ্রার্থীরা খাওয়া দাওয়া করবে টয়লেট থাকলে দুর্গন্ধ ছড়াবে। তবে ন্যায়কুঞ্জের আসা বিচারপ্রার্থীদের জন্য জেলা জজ আদালতের পশ্চিম পাশে আধুনিক টয়লেট করা হবে।”
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারপ্রার্থীদের জন্য ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন কোর্ট বন্ধ আছে তাই খোলা হচ্ছে না হয়ত। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই খোলা থাকবে।
ডিসেম্বরের পুরো মাস ছুটির পর ন্যায়কুঞ্জ চালু করার কথা বলা হলও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পশ্চিমপ্রান্তে রেবতী ম্যানসনে বর্তমানে আটটি এজলাস, মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয় রয়েছে।
এখানে নারী ও শিশু বিচার প্রার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। বিশ্রামাগারে দুইটি শৌচাগার আর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর (ব্রেস্ট ফ্রিডিং) ব্যবস্থা আছে। একসঙ্গে বিশ্রাম নিতে পারে ১০ থেকে ১৫ জন।
এদিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নাজির রেজোয়ান খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ২৪ ডিসেম্বর এখানকার প্রত্যেকটি আদালতে একটি করে প্লাস্টিকের বেঞ্চ দিয়েছি বিচারপ্রার্থীদের জন্য। দেশের আর কোথাও বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা নেই। আমরা চালু করেছি।”
এই বেঞ্চ বিচারপ্রার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এত মানুষের ব্যবস্থা করা তো সম্ভব না। আমাদের জায়গা কম। সিএমএম আদালতে অন্যান্য আদালতের থেকে বেশি মানুষ আসে। সেই তুলনায় আদালতের জায়গা কম। সিএমএম আদালতের জন্য আরো বেশি জায়গা প্রয়োজন।”
উন্মুক্ত স্থানে মাদক পোড়ানোতে অস্বস্তি
মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালত ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে মাঝেমধ্যেই পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মাদকদ্রব্য পোড়ানোর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি খোলা আকাশের নিচে।
মাদকদ্রব্য পোড়ানোর সময় এ এলাকায় অবস্থান করা বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী, পথচারী, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ধোঁয়া ও উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যান। আদালত চত্বরের আশপাশের বাসা-বাড়ির বাসিন্দাসহ সবাই দুর্ভোগে পড়েন। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত লোকজন বিপদে পড়েন সবচেয়ে বেশি।
আশপাশের দোকানদানিরা জানান, প্রায়ই খোলা জায়গায় মাদক পোড়ানো হয়। কখনও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের পাশের রাস্তায়, কখনও মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চুল্লিতে মাদক পোড়ানো হয়।
পাশের আন্ন্দ কনফেকশনারির বিক্রয়কর্মী হাসিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যখন মাদকদ্রব্য পোড়ানো হয় তখন খুবই অস্বস্তি লাগে। মাথা ভারি হয়ে যায়। কিন্ত আমরা কিছু বলতে পারি না, কারণ এখানে পুলিশ থাকে।”
আনন্দ কনফেকশনারির পাশের পান বিক্রেতা সৌরভ বলেন, মাদক পোড়ানোর সময় গাঁজার ধোঁয়া আদালতপাড়াসহ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখ জ্বালা করতে থাকে। এসময় আশেপাশের এলাকার কিছু পথশিশু এসে নিশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া নিয়ে নেশা করার জন্য ভিড় করে।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উন্মুক্ত স্থানে এই মাদক পোড়ানো নিয়ে আমরা আইনজীবীরা বিরক্ত। আমি নিজেই কয়েকবার বিড়ম্বনায় পড়েছি। এর সমাধানের জন্য ডিসি প্রসিকিউশন ও সিএমএম এর সাথে আলোচনা করেছি কীভাবে এর সমাধান করা যায়। তারা কথা দিয়েছে, দ্রুতই এর সমাধান করবে।”
মাদক পোড়ানোর বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এসব মাদক আদালতেই নষ্ট করতে হবে, বাইরে নিয়ে গিয়ে পোড়ানোতে রিস্ক আছে। আমরা আদালতকে বলেছি মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়। যার ফলে এখন সপ্তাহে একদিন মাদক পোড়ানো হয় এবং তা বন্ধের দিনে।”
লিফটের ভোগান্তি শেষ হবে কবে?
ঢাকা জেলা ও মহানগরের আদালতগুলো আলাদা ভবনে। ভবনগুলোতে লিফটের ব্যবস্থাও কম।
কর্মদিবসের সকালে ভবনগুলোর লিফটের সামনে তৈরি হয় লম্বা সারি। অপেক্ষা করতে হয় ২০ থেকে ৩০ মিনিট। সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হন নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বেশিরভাগ বিচারপ্রার্থীকে সিঁড়ি বয়ে ভবনের উপরের বিভিন্ন আদালতে যেতে হয়।
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে বাদী, আসামির হাজিরা, জামিনের আবেদনসহ সব দরখাস্ত জমা দিতে হয় ১০টার মধ্যে। এসময় ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়তে হয় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের। অনেক সময় মামলার শুনানি মিস হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে লিফটগুলো অচল থাকে।”
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত ভবনটি ১০ তলা। এতে মাত্র তিনটি লিফট রয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে ৭ জন করে একসঙ্গে ওঠা-নামা করতে পারে। মাঝেমধ্যে লিফট বন্ধ হয়ে যায়।
একই অবস্থা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে। পাঁচতলা এই ভবনে লিফট মাত্র দুইটি। প্রতিটি লিফটে একসঙ্গে ৬ জন করে উঠানামা করতে পারে।
ঢাকা জেলা জজ আদালতের ভবন দুটি। নতুনটি আটতলা আর পুরনো ভবনটি ছয়তলা। পুরনো ভবনটিতে বিচারকদের জন্য পশ্চিম পাশে দুটি লিফটের একটি নষ্ট। আর পূর্বপাশে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য দুটি লিফটের একটি নষ্ট।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে সিএমএম আদালতে একটি লিফট লাগানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই এটা চালু হবে। বাকি আদালতগুলোতেও লিফট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
সিএমএম আদালতের নাজির রেজোয়ান খন্দকার বলেন, “লিফটগুলো সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে সংস্কারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংস্কার হলে আশা করি, ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।”
২০১৯ সালের ৬ মার্চ এ আদালতের পুরনো ভবনের লিফট ছিঁড়ে পড়ে একজন আইনজীবী নিহত হন। আহত হন আরও ১১ জন বিচারপ্রার্থী ও আদালতের কর্মচারী।
জেলা জজশিপের ভবন দুটিতে নতুন দুটি লিফটের জন্য গত বছরের ৩০ অগাস্ট ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেন। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন গণপূর্ত থেকে দুটি লিফটের ব্যয় প্রাক্কলন করে দিয়েছে। জেলা জজ হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া এ বছরের ১৫ অক্টোবর তা স্বাক্ষর করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অনুমোদনের জন্য। অনুমোদন হয়ে এলে গণপূর্ত কাজ শুরু করবে।
আদালতে গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক মাসুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল আদালতের লিফট সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই কিছুটা হলেও সমাধান হবে। ইতোমধ্যে সিএমএম আদালতে লিফট সংস্কার করার জন্য অনুমোদন হয়েছে।”
দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির এবং ঢাকা জেলা জজশিপ ও মিনিস্ট্রিয়াল কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা মো. খাদেমুল ইসলাম আদালত প্রাঙ্গণ, ভবনসহ আরও কয়েকটি স্থাপনার উন্নয়ন, সংস্কার বিষয়ে মোট ১৮টি কাজের তালিকা দিয়েছিলেন। যেখানে কাজের অগ্রগতি ও অপেক্ষমান কাজের বিবরণ রয়েছে।
এ বিষয়ে অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির আমিনুল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আগে যে ছিল সে বলাতে পারবে। আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।”
পরে খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
শৌচাগার ভোগান্তি কাটেনি এখনো
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শৌচাগার সুবিধা নেই। এ বছরের জানুয়ারিতে আদালতপাড়ার শৌচাগার নিয়ে ভোগান্তির খবর প্রকাশ করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু ভোগান্তির চিত্র যেমন ছিল তেমনি রয়ে গেছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবন ঘুরে দেখা যায়, বিচারপ্রার্থীদের জন্য তিন, চার ও ছয়তলায় তিনটি শৌচাগার রয়েছে। দোতলার শৌচাগারটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
ঢাকা জেলা জজ আদালতের পাশে মসজিদের সামনে একটি ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আরো একটি গণশৌচাগার রয়েছে। সেগুলো টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়।
এছাড়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নিচতলা ও দোতলায় দুটি ছাড়া আর কোথাও শৌচাগার নেই। দুর্গন্ধের কারণে এগুলো ব্যবহার করাও দুরূহ।
সাভার থেকে মামলায় হাজিরা দিতে গত ১৭ ডিসেম্বর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আসেন সাইফুদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আলেয়া বেগম। শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি পড়েন বিপাকে। এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিপরীতে হোটেল স্টার বেকারীর শৌচাগারে যান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে এত মানুষ আসে। এতগুলো আদালত, কিন্ত কোথাও কোনো টয়লেট নেই। আমরা তো আর যেখানে সেখানে টয়লেট করতে পারি না। ডিসি অফিসের সামনে যে একটা টয়লেট আছে সেটাও তালা দেওয়া।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মসজিদের পাশের পাবলিক টয়লেটটি ভেঙে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এখানে তিনতলা পাবলিক টয়লেট হবে।”
তখন সমস্যা অনেকখানি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আদালতে যে সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন আসে সে তুলনায় টয়লেট কম। তবে সরকার যেহেতু শুরু করেছে তা আরো বাড়ানো হবে।”
পুরনো খবর: