৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
Published : 05 Dec 2024, 07:06 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা এর আগে বলা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন বলছে, তাদের ভূমিকা নেওয়ার সময় আসেনি।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একমাত্র ‘অংশীজন’ নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও এক্ষেত্রে জড়িত।
“আমাদের রোল প্লে করার সময় এখনও আসেনি। আমাদের রোল প্লে করার সময় যখন আসবে, তখন আমরা সেটা করব।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ‘নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ নেতাদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
১৮ অক্টোবর এক আদেশে এক মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও অন্য আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
ওই আদেশের দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, “আদালতের নির্দেশ পত্রিকা মারফত এইমাত্র জানলাম। এইমাত্র, রুমে ঢোকার ৫ মিনিট আগে আমার কাছে কাগজটা পৌঁছেছে। আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
“এক মাস সময় দিয়েছেন কিন্তু আদালত; এই সময়ের মধ্যে আমরা তাকে ফেরত আনার চেষ্টা অবশ্যই; আমাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেটা করব।”
এরপর দেড় মাস পার হলেও শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ব্রিফিংগুলোতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলে আসছেন, অন্য মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে বলার পরই কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এসেছে কি না, এমন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত ইন্সট্রাকশন আসেনি।”
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন ও বৈরিতা চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতন প্রসঙ্গে পাল্টাপাল্টি বিবৃতিও দিয়েছে উভয় দেশ।
টানাপোড়েন কমানোর মাধ্যমে সম্পর্কে ‘গতিশীলতা’ আনার আশা নিয়ে ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিবদের নিয়মিত বৈঠকের প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। আর পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, যেকোনো এফওসিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে যতগুলো উপাদান আছে, সবগুলোর রাখার চেষ্টা করা হয়। এজেন্ডা সেটিংয়ের সময় দুপক্ষের সম্মতি লাগে।
বাণিজ্য, সীমান্ত, কানেক্টিভিটি, পানির মতো বড় বিষয়গুলোর পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়াবলিও আলোচনায় থাকার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ ছাড়াও আরও অনেক উপাদান নিশ্চয় আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে এর চেয়ে বেশি তথ্য নেই।”
শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধে কোনো কথা না বললেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে আসছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী যেন সেখান থেকে কোনো ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ না দেন, যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
তাকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার বিষয়ে এর আগে ভারতকে দেওয়া কূটনৈতিকপত্রের (নোট ভারবাল) প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক জানতে চান, ওই কূটনৈতিকপত্রের কোনো জবাব প্রতিবেশী দেশ থেকে এসেছে কি না?
উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “ভারতের কোনো জবাব এসেছে কি না, সেটা আমার জানা নাই।”
বৃহস্পতিবার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি সমাবেশের আয়োজন করছেন। সেখানে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভার্চুয়ালি যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন নেতাকর্মীরা।
লন্ডনে ওই সভার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে কি না, আর ভারত তাকে এই সুযোগটা করে দিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “আমাদের জানা পত্রিকার মাধ্যমে আসা। আমরা মিডিয়াতে যেটা দেখেছি যে, এই রকম একটা পলিটিক্যাল মিটিং আছে, মিটিংয়ে উনি বক্তৃতা দিবেন, আপনারা যে রকম জানেন, আমরাও সেই রকম জানি।
“কীভাবে এটা ফ্যাসিলিটেড হচ্ছে, এটা আমার বক্তব্য দেওয়ার বিষয় না। উনি ভারতে আছেন, এটা ভারত সরকার কীভাবে হ্যান্ডল করছে, তারাই ভালো বলতে পারবে।”