আদালত দীপু মনিকে চার দিন এবং জয়কে পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে পুলিশকে।
Published : 20 Aug 2024, 07:37 PM
শেখ হাসিনা সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের রিমান্ড শুনানির আগে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিলেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা; তিনবারের মন্ত্রী দীপু মনিকে এদিন আদালতে কাঁদতে দেখা গেল।
মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয় দীপু মনি ও জয়কে। তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুলতান সোহাগ উদ্দিন শুনানি শেষে দীপু মনিকে চার দিন এবং জয়কে পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
মামলায় আসামীপক্ষে কোনো আইনজীবী এদিন ওকালতনামা জমা দেননি। তাদের পক্ষে জামিন চেয়েও আবেদন করেননি কেউ। আবেদন না থাকলেও বিএনপিপন্থি একজন আইনজীবী দুই আওয়ামী লীগ নেতার জামিন চেয়ে শুনানিতে কথা বলেন।
শুনানির সময় আদালতের এজলাসে ছিল বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের উপচে পড়া ভিড়। কিছু বহিরাগতকেও এ সময় দেখা যায়।
দীপু মনি ও জয়কে বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে সিএমএম আদালতের দ্বিতীয় তলায় ২৮ নম্বর এজলাসে তোলা হয়।
এসময় দীপু মনি কাঁদছিলেন। তবে জয় ছিলেন চুপচাপ। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাদের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর তাদের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ খুনি খুনি বলে চিৎকার করতে থাকেন।
কাঠগড়ায় ওঠানোর পর দীপু মনির হাতে হাতকড়া পরানোর জন্য চিৎকার করে আদালতকে চাপ দিতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
বিএনপির আইনজীবী সংগঠনের নেতা ওমর ফারুক ফারুকী তখন এজলাসের মাইক্রোফোনে বলেন, “পুরুষ আসামির হাতে হাতকড়া আছে, আপনারা শান্ত হন।”
দিপু মনি ও জয়ের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
তিনি বলেন, “কোটাবিরোধী আন্দোলনে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আটক আসামীদ্বয়ের সংযোগ আছে। হত্যায় হুকুমদানকারী ও উসকানিদাতাদের নামসহ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।”
তার বক্তব্য শেষে আসামি পক্ষে কেউ আছেন কি না জানতে চান বিচারক। আওয়ামী লীগপন্থি কোনো আইনজীবীকে এ সময় এজলাসে দেখা যায়নি।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী আতাউর রহমান তখন বলেন, “আমি আসামিপক্ষে শুনানি করব।”
তিনি বলেন, “আমি উভয় আসামির জামিন চাই।”
শুনানি চলাকালেও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে কাঁদতে দেখা যায়। জয় আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপিপন্থিদেরর তুমুল হট্টগোলে তার কথা তলিয়ে যায়।
পরে ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিচারক বলেন, “আটক আসামিরা এজাহারভুক্ত আসামি নয়। তবে ঘটনার নির্মমতা এবং মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় দীপু মনিকে চার দিনের…।”
বিচারক এ কথা বলার পর আবারও হট্টগোল শুরু করেন উপস্থিত আইনজীবীরা।
তারা ১০ দিনের রিমান্ড দেওয়ার জন্য অনবরত চাপ দিতে থাকলে দিপু মনিকে চার দিনের এবং আরিফ খান জয়কে পাঁচদিনের রিমান্ডের লিখিত আদেশ দিয়ে বিচারক দ্রুত এজলাস থেকে নেমে যান।
বিচারক নেমে যাওয়ার পর কাঠগড়ায় থাকা দীপু মনিকে আক্রমণ করার জন্য এক নারী আইনজীবী তেড়ে গেলে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ সময় এজলাসে আইনজীবীদের বসার বেঞ্চে দাঁড়িয়ে হট্টগোল করতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
প্রায় ১৫ মিনিট কাঠগড়ায় অবরুদ্ধ থাকার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দীপু মনি ও জয়কে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্যে সোমবার দীপু মনি ও জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, গত ১৩ আগস্ট তা দায়ের করেন আমির হামজা শাতিল নামের এক ব্যক্তি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ছয়জনের নাম রয়েছে এ মামলার আসামির তালিকায়। বাকি পাঁচজন হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
এ ছাড়া পুলিশের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।
এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকালে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে মুদি দোকানি সায়েদ নিহত হন।
পুরনো খবর