সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষের সচিবালয়ে অবরুদ্ধ থাকার তথ্য এসেছে।
Published : 25 Aug 2024, 08:33 PM
আনসার সদস্যদের নজিরবিহীন ঘেরাও কর্মসূচিতে সচিবালয়ে অবরুদ্ধে হয়ে পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে দেয়াল টপকে বের হতে দেখা যাচ্ছে।
রোববার সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন- এপিবিএন এর সদস্যদেরও দেয়াল টপকাতে দেখা গেছে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত তিন দিন আন্দোলনের পর রোববার সকাল থেকে সচিবালয় ঘিরে অবস্থান নেন আনসার সদস্যরা। বিকাল পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় ঘেরাও কঠোর করে সচিবালয়ের সব গেইটে অবস্থান নেন তারা।
ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যেই সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৈঠকের পর আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন। তবে তা না মেনেই ঘেরাও জারি রাখেন আনসাররা।
কাউকে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা। তাদের মুখে মুখে একই কথা, চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না তারা।
রোববার দিনের অফিস সূচি শেষ হওয়ার পর বের হওয়ার সময় আনসারদের কঠোরতার মুখে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীসহ ভেতরে থাকা সব ধরনের মানুষ।
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষের সচিবালয়ে অবরুদ্ধ থাকার তথ্য এসেছে।
অবরুদ্ধতার এই পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের পেছনের ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে উঁচু দেয়াল টপকে এপিবিএনের সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
সচিবালয়ের ক্লিনিক ভবন ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে৷
সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, বন্ধ রয়েছে সচিবালয়ের সব গেইট আর বাইরে বিক্ষোভ করছেন আনসার সদস্যরা৷ তারা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন, “চাকরি জাতীয়করণ চাই।”
অবরুদ্ধতার এই পরিস্থিতিতে ভেতর থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী, সেখানে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন৷ তাদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগে রয়েছেন, আটকে পড়ারাও পরিবারের কাছে ফিরতে চান। নিরাপত্তাহীন এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের আকুতি আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএন এর একজন সদস্য বলেন, “সকাল থেকেই ডিউটি করছি৷ সারাদিন খাইনি৷ খাবার আসতেও পারেনি৷ এখন বাধ্য হয়েই দেয়াল টপকে বের হব৷”
ফয়সাল নামের একজন কর্মচারী বলেন, “কখন বের হতে পারব জানি না৷ এ এক অনিশ্চিত বিষয়৷ আমরা সকাল থেকেই বন্দি৷ ভেতরে পর্যাপ্ত খাবার নেই৷ বাধ্য হয়েই দেয়াল টপকে বের হব৷”
আনসারদের দাবি নিয়ে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি গঠন
সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে রোববার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রোববার দশ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে আন্দোলনরত অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের চারজন প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জনিনিরাপত্তা বিভাগ থেকে এই কমিটি গঠন করার আদেশ জারি করা হয়।
এর আগে সচিবালয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এই কমিটি গঠনের বিষয়ে তথ্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। একই সঙ্গে তিনি আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্তের কথাও বলেছিলেন।
সচিবালয়ের ওই বৈঠকে তথ্য উপদেষ্টা সচিবালয়ের নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং কয়েকজন আসনার সদস্যকে দেখা যায়।
তবে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আনসার সদস্যরা, যা তাদের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি থেকে পরিষ্কার। তারা বলছেন, চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা ছাড়া তারা ঘরে ফিরবেন না, প্রয়োজনে তারা মরবেন।
এমন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির বিষয়ে আদেশ জারির তথ্য এসেছে।
আদেশে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার (পুরুষ/মহিলা), এসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) ও প্লাটুন কমান্ডার (পিসি)'গণ কর্তৃক উত্থাপিত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে নির্দেশক্রমে নিম্নরূপ কমিটি গঠন করা হলো।”
এ কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদকে। পরিচালক (প্রশাসন) জাহানারা আক্তারকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল তসলিম এহসান, বান্দরবান জেলার ২৭ ব্যাটালিয়নের পরিচালক রাসেল আহমেদ, সহকারী পরিচালক (রেকর্ড) মো. আবুল কালাম আজাদ, রাঙ্গামাটি জেলার ১৩ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমাণ্ডার মো. হুমায়ুন কবির শরীফ এবং অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির চারজন।
কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে জন্য বলা হয়েছে।