ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে এই উৎসব চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত।
Published : 19 Jul 2023, 11:15 PM
জামদানিকে কেবল টিকিয়ে রাখা নয়, বরং এর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং বয়নশিল্পীদের জীবন মানের টেকসই উন্নয়ন, বয়নশিল্পকে পরিবেশবন্ধব করার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘অনন্য বয়নে জামদানি উৎসব'।
এই আয়োজনে ২৫টি উন্নত মানের জামদানি শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ইন্সটলেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে বয়নপ্রক্রিয়া।
ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় প্রদর্শনী এবং উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।
সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের উদ্যোগে, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১১ দিনব্যাপি এই প্রদর্শনী।
বুধবার সন্ধ্যায় উৎসব উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে ছিলেণ বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি গেইল মার্টিন, এসইপি টাস্ক টিম লিডার ইউন জু অ্যালিসন ই, বস্ত্রশিল্প বিশেষজ্ঞ, সংগ্রাহক ও কলকাতার দ্য উইভার্স স্টুডিওর মালিক দর্শন মেকানি শাহ, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোকসানা খান।
জামদানির ঐতিহ্য ধরে রেখে উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে ভাবেন। যার কারণে আমাদের সরকার আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কাজ করছে।”
বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা মার্টিন বলেন, “জামদানি নিয়ে যে প্রজেক্টটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে জামদানি শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষের জীবনমানের যেমন উন্নয়ন ঘটবে, তার সাথে এই প্রজেক্টটি টেকসই পরিবেশবান্ধব হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
জাতীয় চিত্রশালার ৭ নম্বর গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনী। এতে আদি জামদানি নকশায় বোনা শাড়ি, নকশার নমুনা, প্রাকৃতিক রংয়ের উপকরণ, জামদানি কাপড়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য, ইনস্টলেশন ও জামদানি বয়নশিল্পীদের জীবন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি নানা ইলাস্ট্রেশন স্থান পেয়েছে।
এই প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রদর্শনীর মূল সুরটি অনুপ্রাণিত হয়েছে বেশ কিছু আদি জামদানি বয়ন নকশা থেকে। শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উঁচু করে থাকা আদি জামদানি সবাই যেন খুব সহজেই চিনতে পারে, এই প্রদর্শনীতে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।
“১৫০ থেকে ১৭৫ বছরের পুরোনো জামদানি শাড়ির ছবি থেকে ধারণা নিয়ে পুনরায় সৃষ্টি করা হয়েছে এই প্রদর্শনীর জামদানি; বংশপরম্পরায় অর্জিত জ্ঞান থেকে নতুন এই জামদানিগুলো বুনেছেন এই সময়ের শীর্ষসারির ওস্তাদ ও কারিগরেরা। আমাদের দেশের জামদানি বয়নশিল্পীরা আবারও প্রমাণ করেছেন, উত্তরাধিকারের দায় উপেক্ষণীয় নয়; বরং পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া পেশাগত শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চিরবহমান।”
আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে ২৫টি নতুন জামদানি শাড়ি প্রদর্শিত হচ্ছে, যেগুলো ১৮ জন ওস্তাদ এবং ২০ জন শাগরেদের নিবিষ্ট সৃজনের পাশাপাশি ছিল সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পিকেএসএফের পর্যবেক্ষণ।
চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, “প্রদর্শনীতে আলংকরিক বিন্যাসের ছন্দ। প্রাকৃতিক রঙের নান্দনিক বর্ণময়তা এবং শুদ্ধতম জামদানি নকশার সৃজনশীল পরিকল্পনায় সমসময়ের জামদানি শাড়ির রূপান্তর উপস্থাপন করা হয়েছে।
“এছাড়া অবহেলায় জামদানি নকশার বিপর্যয় কেমন করে ঘটতে পারে, কাপড়ের জমিনে ঘনত্বের পার্থক্যে যেভাবে মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে কিংবা মোটিফের ঘনত্ব একটি শাড়ির আভিজাত্যকে মানের মতে যেভাবে নান্দনিক করে তুলতে পারে এমন সব বিষয়ও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই প্রদর্শনীর বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায়।"
উৎসবে ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে জামদানি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা। প্রতিদিনই থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসব উপলক্ষে একটি বইও প্রকাশিত হবে বলে জানান আয়োজকেরা।