র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা বিশেষ ক্যাটাগরিতে তারা তাদের আইন অনুযায়ী করেছে। এটাও আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি না।”
Published : 03 Sep 2024, 09:11 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরের সময় আলোচনায় অর্থ ও বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, আর্থিক যে ব্যবস্থাটি আছে, বাণিজ্যিক প্রশ্ন আছে, সবগুলো নিয়ে আলাপআলোচনা হবে।”
রাষ্ট্রক্ষমতায় পটপরিবর্তনে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফরে বাংলাদেশে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল।
প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ছাড়াও থাকছেন দেশটির রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিনিধিদলটি ১৫ সেপ্টেম্বর আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারা ডনাল্ড লুর চেয়ে বেশি সময় থাকবেন।
দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বৈঠকের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সহযোগিতা অবশ্যই চেয়েছি, তবে কীভাবে চেয়েছি, সেটা আমি বলতে পারব না। এটা হয়ত বিস্তারিত বলতে পারবেন সালেহউদ্দিন সাহেব।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসলে শুধু লু’র সফর না, তার সাথে একটা টিমও আসবে। লু বরং তুলনামূলকভাবে কম সময় এখানে থাকবেন।
“কিন্তু তবে তার টিম, ট্রেজারির এবং বিভিন্ন বিভাগের আছে, তারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিটিং করবে এবং এটা আসলে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই কথা হবে। সফরের পরে বলতে পারব, আসলে কি কি হয়েছে, না হয়েছে।”
তৌহিদ হোসেন বলেন, “ডনাল্ড লুর সফর, মানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফর যেকোনো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এটুকুই বলি। তারপরেও দেখা যাবে যে, কোন কোন বিষয়ে অগ্রগতি হয়, সে অনুযায়ী আমরা এটার গুরুত্ব নির্ধারণ করব।”
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ‘চাওয়ার’ বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য টেনে এক সাংবাদিক জানতে চান, বিষয়টি আলোচনার অংশ হতে পারে কি না?
উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমার জানা মতে না। আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীতো এটা স্পষ্ট করে বলেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, না এই রকম কিছু নাই। আমরা কখনো এটা করি নাই। আমার জানা মতে নাই, কিন্তু এর বাইরে কিছু আছে কি না আমিতো বলতে পারব না।”
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা বিষয় আলোচনার অংশ হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার জানা মতে, আমি দেখিনি যে, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা, এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। প্রসঙ্গ উঠতেই পারে। তবে, দেখতে হবে আমাদের সবচেয়ে ভালো স্বার্থ যেটা, সেদিকে আমরা দেখব। অর্জন করার মত যেগুলো আছে, সেটা দেখতে হবে।”
নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ভিসা বিধিনিষেধকে সম্পর্কে বাধা হিসেবে উল্লেখ করে করা এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি মনে করি না যে, ভিসা পলিসি সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, সাধারণ ভিসাপ্রার্থী যারা, তাদেরকেতো কোনো বাধা দিচ্ছে না।
“এটা একটা বিশেষ ক্যাটাগরিতে তারা তাদের আইন অনুযায়ী করেছে। এটাও আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি না।”
কার কী মনোভাব দেখব পরে, ভারত প্রসঙ্গে উপদেষ্টা
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কোন দেশের কী মনোভাব, তা বোঝার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করার কথা বলছেন তৌহিদ হোসেন।
ভারতের মনোভাবের প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক বলেন, “আন্তঃদেশীয় ট্রেন বন্ধ, ভিসা সেন্টার খুলতে বিলম্ব করা এবং ডিজেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমরা শুনছি-- আপনি কি মনে করেন, এগুলো ভারতের দিক থেকে এক ধরনের বৈরিতা বর্তমান সরকারের প্রতি?”
উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি এ কথা বলতে চাই না। বিষয় হচ্ছে যে, আমরা একটি অস্বাভাবিক সময় পার করছি। এর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতেই পারে। আমরা এটাকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি।
“এবং আমরা দেখব যে, কিছুদিনের মধ্যে… পরিস্থিতিতো ১৫ দিন আগের থেকে আজকে অনেক স্থিতিশীল, আরও স্থিতিশীল হবে। এবং তখন আমরা বিচার বিবেচনা করে দেখব যে, কার কী মনোভাব।”
ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার প্রয়োজনের কথা তুলে ভারতের ভিসা সেন্টার চালুর সময়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে আমি যোগ্য না এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। কারণ, ভারতীয়রা কখন ভিসা পুনরায় চালু করবে, এটা পুরোপুরি তাদের সিদ্ধান্ত। আমার জানা মতে তেমন কিছু নাই যে, কবে তারা এটা করবে।
“ব্যবসা বাণিজ্যেতো ভারতীয়দের স্বার্থও আছে। আমাদের যেমন আছে, ভারতীয়দের স্বার্থ আমাদের চেয়েও বেশি। চিকিৎসা… বাংলাদেশে চিকিৎসা পাওয়া যায় অনেক। প্রয়োজনেতো অন্যান্য দেশও আছে, সেখানেও যেতে পারে মানুষ। যেহেতু আপনি ভিসা নিয়ে সমস্যা পাচ্ছেন।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যখন ভিসা সহজ হবে, তখন যাবে, তখন ভারতীয়রাও লাভবান হবে। আমাদের রোগীরা যেভাবে চিকিৎসা পাবে, ভারতের হাসপাতালগুলোও অর্থ পাবে।”
কবে নাগাদ ভিসা সেন্টার খোলা হবে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে ভারতীয় হাই কমিশনারের বৈঠকে আলোচনা না হওয়ার কথা বলেন তৌহিদ হোসেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নিউ ইয়র্ক যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয় জানতে চাওয়া হয় উপদেষ্টার কাছে।
উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “জাতিসংঘে যাওয়ার পর কার কার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে, সেটা নিয়ে আমরা এখনও কাজ করছি।”
তালিকায় ভারত আছে কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “তালিকায়তো আছে। ভারতের কে যাবে, আমরাতো এখনও নিশ্চিত করে জানি না। সেটার উপর নির্ভর করবে।”