আসামি হিসাবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ করেননি মামলার বাদী মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, যিনি এমপি আনারের মেয়ে।
Published : 22 May 2024, 08:41 PM
ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে।
কলকাতায় আনারের খুন হওয়ার খবর আসার পর তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় এ মামলা করেন বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান।
মামলা করার পর ডরিন সাংবাদিকদের বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এজাহারে বলা হয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবন এলাকার ৫ নম্বর ভবনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার সপরিবারে থাকতেন, ৯ মে বিকালে সেখান থেকে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ১১ মে বিকালে ভিডিও কলে কথা হয় মেয়ে ডরিনের সঙ্গে, তখন বাবার কথাবার্তা তার কাছে অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল।
পরে বারবার ফোন দিয়েও আর বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী ডরিন।
“১৩ মে তার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামা নামে এক আত্মীয়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ আসে, যার ভাষা ছিল এমন- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে।’ আমি অমিত শাহর কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।”
পরে আরও মেসেজ আসে, যা তার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা পাঠিয়ে থাকতে পারে বাদীর অভিযোগ।
এজাহারে বলা হয়, খোঁজ-খবর করে কোথাও না পেয়ে কলকাতায় গোপাল বিশ্বাস নামে এমপি আনারের এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দিয়ে ১৮ মে বারানগর থানায় জিডি করান বাদীর পরিবার। পরে তারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারেন, তাকে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণ’ করেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা রুবাইয়াত জামান বলেন, “সর্বশেষ শেরেবাংলা নগর থানা এলাকার এমপি হোস্টেল থেকে সংসদ সদস্য আনার বের হওয়ার কারণেই এ থানায় মামলা হয়েছে।"
দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩৪ ধারায় করা এ মামলা গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।
এদিকে আনারের মেয়ে ডোরিন পরে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।
পরের কয়েক দিনে দুই দেশের পুলিশের মধ্যে যোগাযোগের পর বুধবার সকালে কলকাতার সংবাদমাধ্যমে আনারের খুন হওয়ার খবর আসে।
পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার একটি বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের। ওই ঘটনায় জড়িত আরো কয়েকজনকে তারা খুঁজছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এমপি আনারের মেয়ে ডরিন। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের তিনি চেনেন কি না।
উত্তরে ডরিন বলেন, “আমি তাদের কাউকেই চিনি না। কিন্তু তাদের চিনতে চাই, জানতে চাই কেন তারা আমার বাবাকে হত্যা করল।”
কাউকে সন্দেহ করছেন কি না– এ প্রশ্নে এমপি আনারের মেয়ে বলেন, “কাউকে আমি সন্দেহ করছি না। কিন্তু খুনিদের পরিচয় জানতে চাই। তারপর আমি আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করব।”