বেড়েছে কিউলেক্স মশা, অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী

“কিউলেক্স মশার ঘনত্ব এখন ৯৫ শতাংশের বেশি। এটা এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। এটা অনেক, ভয়ংকর অবস্থা। আপনি কোথাও দাঁড়াতে পারবেন না, মশা এমন যন্ত্রণা করবে।”

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 07:52 PM
Updated : 17 March 2024, 07:52 PM

গ্রীষ্মকাল আসার আগেই কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে রাজধানীতে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী বলছেন, মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনেরই তৎপরতা খুবই কম।

দুই নগর সংস্থাই অবশ্য দাবি করছে, মশা নিধনে কাজ করছেন তারা। যদিও এক গবেষণায় মশা বেড়ে যাওয়ার তথ্য আসায় করপোরেশনের ‘তৎপরতা’ কতটা কাজে দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকায় মশার ঘনত্ব, মশার প্রজাতি এবং মৌসুম অনুযায়ী মশার ধরন দেখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে নিয়মিত গবেষণা হয়ে আসছে।

এ গবেষণায় এক ধরনের বিশেষ ফাঁদ ব্যবহার করে দক্ষিণখান, উত্তরা, মিরপুর, সাভার ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় মশা ধরা হয়। প্রতিটি ফাঁদে কতটি মশা ধরা পড়ল তা হিসাব করে মশার ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষণায় পাওয়া তথ্যের বরাতে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পাতা প্রতিটি ফাঁদে গড়ে ২০০টি মশা ধরা পড়ত। ডিসেম্বর মাসে সংখ্যাটি বেড়ে হয় ২২৩টি।

আর জানুয়ারিতে বেড়ে হয় ৩০০টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮৮টি এবং মার্চ মাসে প্রতিটি ফাঁদে ধরা পড়া মশার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২০টি।

ডোবা-নালা কম থাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কিউলেক্স মশার সংখ্যা উত্তর সিটি করপোরেশনের চেয়ে কম।

এ পর্যন্ত যে মশা ধরা পড়েছে, তার ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা। বাকি ১ শতাংশের মধ্যে এইডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া মশা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক কবিরুল।

ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগের জন্য কিউলেক্স মশা দায়ী, এটি প্রাণঘাতী নয়। তবে এই মশা মানুষকে প্রচুর কামড়ায়, বিরক্তির উদ্রেক করে।

মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে ড. কবিরুল বাশার বলেন, “শীতকালে যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন ড্রেন, ডোবা নর্দমার পানি ঘন হয়ে পানিতে জৈব উপাদান বেড়ে যায়। এ সময় কিউলেক্স মশার প্রচুর প্রজনন ঘটে; যে কারণে এ সময় মশা বেড়ে গেছে।

“কিউলেক্স মশার ঘনত্ব এখন ৯৫ শতাংশের বেশি। এটা এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। এটা অনেক, ভয়ংকর অবস্থা। আপনি কোথাও দাঁড়াতে পারবেন না, মশা এমন যন্ত্রণা করবে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওইসব জায়গা পরিষ্কার করে লার্ভিসাইডিং করতে হবে। আর বৃষ্টিপাত শুরু হলে মশার উপদ্রব কিছুটা কমবে।”

অতিষ্ঠ নগরবাসী

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা এও অভিযোগ করছেন, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তেমন কাজ করছে না।

বাড্ডার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই এলাকায় সারাবছরই মশার উপদ্রব আছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম খুব একটা দেখা যায় না।

“মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে কয়েল, অ্যারোসল ব্যবহার করি। প্রায় সব ঘরেই মশা মারার ব্যাট রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ মশা প্রতিরোধে বাসার জানালায় লোহার জালি যুক্ত করেছেন। আমাদের এলাকাটি আগে ইউনিয়নে ছিল। সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার প্রথম বছর মশক নিধন কর্মসূচি বেশি ছিল। তেমন সক্রিয়তা আবার দাবি করছি।”

মিরপুর-১২ নম্বরের ডি ব্লকের বাসিন্দা সামিয়া রহমান বলেন, এবার মশার উপদ্রব অন্য বছরের তুলনায় বেশি মনে হচ্ছে তার।

“মশার ওষুধ ছিটানো হয় না বললেই চলে। সিটি করপোরেশনের কোনো তদারকি নেই এইদিকে। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এতো মশা বাড়ত না।”

মিরপুরের ধামালকোটের বাসিন্দা নাসরিন জাহান জানান, সন্ধ্যার আগে থেকেই তার এলাকায় মশার উপদ্রব শুরু হয়। সেজন্য বিকালেই বাসার জানালা বন্ধ দেন। তারপরও মশা থেকে বাঁচতে পারেন না।

তার কথায়, “কীভাবে যেন বাসায় মশা ঢুকে যায়! রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমাই। কিন্তু অনেকবার মশারি থেকে বাইরে আসতে হয়, তখন মশারির ভেতরেও মশা ঢোকে।

“আর সবচেয়ে দুঃখজনক হলো আমার বাচ্চাটাকে মশা কামড়ায় বেশি। সে বলতে পারে না, মশা গায়ে বসলে বুঝতেও পারে না।”

রামপুরার কলেজছাত্রী লুৎফুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তাঘাট সব জায়গাতেই মশা ঘিরে ধরে। এক মাস আগেও এমন ছিল না। সন্ধ্যার দিকে হয়ত একটু চা খেতে গেলাম বাইরে, উপরে আর চারপাশে ঘুরতেই থাকে।

“বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে বের হওয়ার মত অবস্থা নাই। বাইরে বের হওয়ার পর আসলে বাঁচার অবস্থা নাই, মশা গায়ের সাথে লেগেই থাকে।”

মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে দনিয়া এলাকাতেও। সেখানকার বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বলেন, মশা বাড়লেও মশক নিধনে কোনো ব্যবস্থা নেই।

“দুপুর থেকেই বাসায় কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। মশা মারতে রাখতে হয় ব্যাট। আর মশারি ছাড়া ঘুমানোর চিন্তাও করা যায় না।”

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে কম।

“আমরা নালা, ড্রেন, জলাশয় এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে মশার ওষুধ স্প্রে করছি। প্রতিটি এলাকায় আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আমরা আশা করছি, মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবো।”

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিএনসিসি এরইমধ্যে মশক নিধনে অভিযান শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কিউলেক্স মশা নিধনে আমাদের সব ফোর্স কাজে লাগিয়েছি।”