“শাহবাগে আটকে ছিলাম অনেকক্ষণ, এখন আবার জিরো পয়েন্টে। যাত্রীরাও খুব বিরক্ত, এসব যে আর কতোদিন চলবে,” বলেন এক বাসচালক।
Published : 08 Jul 2024, 08:12 PM
সড়ক অবরোধ করে যে কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছে, সেই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা।
শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেইটসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্রসিংয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়েছে। তাতে আটকা পড়েছে অফিস শেষে ঘরমুখো কর্মজীবীদের বহনকারী যানবাহন।
ডিএমপির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানান হয়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে নিমতলী, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, ইউবিএল (পল্টন) ক্রসিং, আগারগাঁও ক্রসিং, শাহবাগ, জিরো পয়েন্ট, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, পুলিশ ভবন ক্রসিং (মিন্টো রোড), বাংলামোটর, সোনারগাঁও ক্রসিং এবং ফার্মগেট ক্রসিংয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছে। কোনো সংঘাত না হলেও রাস্তায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়েছে।
দুর্ভোগে পড়াদের একজন গাড়িচালক শাকিল জানান, গাড়ির মালিককে নিয়ে তিনি গুলশান থেকে বের হন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে। গাড়িটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আগারগাঁও লিংক রোডে এলে পুলিশ জানিয়ে দেয়, আগারগাঁওয়ে রাস্তা ব্লক আছে। তবে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র ক্রসিং হয়ে মিরপুর রোডের দিকে যাওয়া যাবে।
তবে গাড়ির লম্বা সারি দেখে তিনি বিজয় সরণি, লেক রোড হয়ে মিরপুর রোডে ওঠার জন্য যাত্রা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক ঘণ্টাতেও বিজয় স্মরণী পৌঁছাতে পারেননি।
ট্রাফিক পুলিশ অবশ্য বিভিন্ন বিকল্প সড়কে গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দিচ্ছিল। আগারগাঁও ক্রসিংয়ে আন্দোলনকারীরা বসার পর পুলিশ আবহাওয়া অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে মিরপুর রোড হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিল।
আদালতের রায়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরার পর যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার অংশ হিসেবে ষষ্ঠ দিনের মতো সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটা আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এরপর তারা মিছিল নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাস্তাও অবরোধ করেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিছিলটি ফার্মগেইট মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। তাতে চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বিকালে প্রায় একই সময়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে গুলিস্থান জিরো পয়েন্ট অবরোধ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়' এর ব্যানারে সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা থেকে একটি মিছিল বের করে। পুলিশের কাছ থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত অনুমতি নিলেও মিছিলটি নিয়ে বংশালে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা গুলিস্থানের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি ফুলবাড়িয়া পৌঁছালে পুলিশ ফের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হয়।
কোতোয়ালি জোনের এডিসি বদরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের বার বার বুঝিয়েছি, তারা শোনেননি। তাদের বলা হয়েছে, তাঁতীবাজার থেকে গুলিস্থানের দিকে না যেতে।
“আমরা তাদের বংশাল, আলুবাজার ও ফুলবাড়িয়াতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, তারা এসব উপেক্ষা করে জিরো পয়েন্টের দিকে অবস্থান নেয়।”
আন্দোলনকারীরা গুলিস্থান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিলে সচিবালয় এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অফিস শেষে সচিবালয় থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো আটকা পড়ে। পুলিশ অবশ্য বিভিন্ন বিকল্প সড়কে গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সচিবালয় থেকে বের হওয়া সরকারি একটি প্রকল্পের গাড়িচালক সুমন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বলেন, বিকাল ৫টায় সচিবালয় থেকে বেরিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে জাতীয় ঈদগাহর কোণায় আটকে রয়েছেন।
“চারদিকে গাড়ি আর গাড়ি। কোনদিকে নড়াচড়া করার উপায় নেই।”
গাড়ি ঘুরিয়ে চলে আসবেন, সেই পথও পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির কারণে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় থেকে বিজয় সরণি কিংবা তিব্বত মোড়ের দিকেও তীব্র যানজট দেখা গেছে। যানজট এড়াতে ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেল আরোহীর পাশাপাশি গণপরিবহনের অনেক বাসও মূল সড়ক এড়িয়ে পাশের সড়কে ঢুকে পড়ায় জটের তীব্রতা বেড়েছে।
মোটরসাইকেল চালক জিহাদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিল হয়ে সাতরাস্তার মোড় কোনো রকমে আসতে অনেক সময় লাগে। তারপরই গলিপথে ঢুকে নাবিস্কো মোড় দিয়ে বের হয়ে মহাখালী আসি। মেইন রোড দিয়ে আসলে আরো সময় লাগতো।’’
সদরঘাটগামী সাভার পরিবহনের এক চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাভাবিকভাবে আমরা প্রতিদিন ৪/৫ বার আসা যাওয়া করতে পারি। কিন্তু কয়েকদিন যাবত আন্দোলনকারীদের কারণে জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে।
“আজকে যাওয়ার পথে শাহবাগে আটকে ছিলাম অনেকক্ষণ, এখন আবার জিরো পয়েন্টে। যাত্রীরাও খুব বিরক্ত, এসব যে আর কতোদিন চলবে।”
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা দুপুর থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়। এসময় তারা সাভার-আশুলিয়া মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়, ফলে কোনো গাড়ি যেতে পারছিল না।
এসময় অফিস শেষে আশুলিয়ায় ফিরছিলেন আবিদুল ইসলাম। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আন্দোলনকারীরা গাড়ি যেতে দিচ্ছিল না, ক্যাম্পাস থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত জ্যাম তৈরি হয়।
“ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে রিকশা নিয়ে অনেকটা এগিয়েছি আমি। তারপর ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আরেকটা রিকশা নিয়েছি। অনেক মানুষকে হেঁটে হেঁটে যেতে দেখলাম। অন্য সময় যে জায়গা ১০ মিনিটে পৌঁছাতে পারতাম, সে জায়গা যেতে এক ঘণ্টা লেগে গেল।”
নীলক্ষেত থেকে মিরপুর ফিরছিলেন লিয়া আহমেদ। তিনি বলেন, নীলক্ষেত থেকে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা পেলেও এরপর জটে পড়ে যান তিনি।
“গাড়ি থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে দেখলাম জ্যাম কমছে না, প্রচুর জ্যাম। ভেতরের পথ দিয়ে রিকশা নিয়ে যাচ্ছি, কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।”