চুক্তির সময় ১৪ তলা ভবন করার কথা থাকলেও বোরাক রিয়েল এস্টেট পরে ১৮ তলা ভবন করে। অসম চুক্তি নিয়ে সে সময় সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়।
Published : 12 Apr 2025, 12:24 AM
দীর্ঘ টানাপড়নের পর ঢাকার বনানীতে শেরাটন হোটেল ভবনে নিজেদের শেয়ারের অংশ বুঝে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ।
এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বোরাক-ডিএনসিসি প্রকল্পের শেরাটন হোটেল ভবনের শেয়ার বণ্টন সমস্যার সমাধান হল।
বুধবার নগর ভবনে হোটেল শেরাটন ও ডিএনসিসির মধ্যে দখল হস্তান্তরনামা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
চুক্তি স্বক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ সমস্যা খামখেয়ালি করে অন্যরা করেনি, আমি করতে পেরেছি।
"আমার কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের যে পরিমাণ হিস্যা যেখানে রয়েছে, যেগুলো থেকে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, সেগুলো আমি আদায় করে নেব।"
রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ওই ভবনের হিস্যা নিয়ে জটিলতা দীর্ঘদিনের।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে বোরাক রিয়াল এস্টেটের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করার কথা ছিল।
চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ১৪ তলা ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অসম এই চুক্তি নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়।
সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর বনানীর ওই সম্পত্তি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভাগে যায়।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ পরে অভিযোগ করে, বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১৪ তলা ভবন নির্মাণের। সে জায়গায় ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক। চুক্তি অনুযায়ী ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে করপোরেশনকে তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
জটিলতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি কমিটি করে। ওই কমিটির কাছে বোরাক কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দেয়, ১৫ থেকে ২৮ তলায় তারা ৪০ শতাংশ মালিকানা সিটি করপোরেশনকে দিতে চায়। ওই প্রস্তাব ডিএনসিসির বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়।
তারপরও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি ঝুলে ছিল, যার নিষ্পত্তি হল অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসে।
জটিলতা না কাটায় ডিএনসিসি মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, "কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে নগর কর্তৃপক্ষ যেমন মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছিল, তেমনি হোটেল শেরাটন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও বছরের পর বছর লোকসানের মুখে পড়েছিল। এতে দেশের পর্যটন খাতেও ধাক্কা লাগছিল।
"হোটেল শেরাটন ছিল বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণে দুই পক্ষই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল। অবশেষে সেটার সমাধান হয়েছে।"
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন, বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের পরিচালক মো. সীমশাদ রহমান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।