“দেখুন না কত বাচ্চা আনন্দ করছে। দিস ইজ এ রিয়াল হ্যাপিনেস অব দ্য ডে। সেজন্য আমি একে বলছি- ঈদ-ভ্রমণ, ঈদ ট্রাভেলিং।”
Published : 01 Apr 2025, 08:22 PM
গন্তব্য চিড়িয়াখানা; উদ্দেশ্য ‘বাঘ মামাকে’ দেখা। ঈদের নতুন পোশাকে সেজেগুজে, চোখে রঙিন চশমা পরে বাবা-মার হাত ধরে মেট্রোরেলে চেপেছে শিশু ওমর ফারুক।
একদিকে মেট্রোতে চড়ার আনন্দ, অন্যদিকে বাঘ দেখা উত্তেজনার আঁচ ওমর ফারুকের কণ্ঠে- “আজকে বাঘ মামাকে দেখতে যাব। শুনেছি বাঘ মামির দুইটা বাচ্চা আছে… দেখতে ঠিক আমার মতই ছোট্ট।”
ফার্মগেইট থেকে মেট্রোরেলে ওঠা ফরিদা কানিজ বললেন, “পুরো ট্রেনে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষজনের এতো ভিড়। দেখে মনে হয়েছে আজকেটি দিনটি ‘অফিস ডে’। ঈদের ছুটিতে কেউ যাচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের বাসায়, কেউবা চিড়িয়াখানায় কিংবা শিশু পার্কে।”
ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই চলছে মেট্রোরেল। আর এই সুযোগে মানুষজনও হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
ঢাকার যানজটে স্বস্তি দিয়ে যে মেট্রোরেলের পথচলা শুরু, সেটিই এখন রাজধানীবাসীর ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে থাকেন সালাহ আকরাম-মুন্নী আখতার দম্পতি। বেলা ১২টায় বাসা থেকে বেরিয়েছেন তারা মিরপুর ১০ নম্বরের উদ্দশ্যে।
ঈদের লম্বা ছুটির কারণে রাস্তা-ঘাট খালি, ভাড়াও কম গণপরিবহনের। কিন্তু এই দম্পতির দুই মেয়ে রিনভী ও দিতির- আবদার মেট্রোরেলে চড়বে। ব্যাস, তাদের সংসারের এই দুই ‘রানি’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
৬ বছরের দিতি বলল, “মেট্রোরেল থেকে ঢাকাকে দেখতে কত সুন্দর না দেখায়। কোনো শব্দ নাই, ধুলাবালু নেই… ভালো লাগছে।”
দিয়াবাড়ি হচ্ছে মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তরের শেষ স্টেশন। সেখানে দেখা গেল প্রচণ্ড ভিড়; লাইন ধরে টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।
এই স্টেশনে ছেলে-মেয়েক নিয়ে এসেছে স্কুলশিক্ষক সাহারা খাতুন, তারাও যাবেন চিড়িয়াখানা।
“ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় যাব। মিরপুর ১০ নম্বরে মেনে রিকশায় যাব চিড়িয়াখানায়। ছেলে-মেয়েদের শখ আজকে পশুপাখিদের সাথে ঈদের ছুটি কাটাবে।”
কেন মেট্রোরেলে জানতে চাইলে তার জবাব, “দ্রুত যাওয়া যায় এবং কোনো ঝুটঝামেলা নেই। এয়ার কন্ডিশন মেট্রোরেলে চড়লে রোদের উত্তাপ থেকেও বাঁচা যায়।”
তার ছেলে সামিউল হক বলল, “চিড়িয়াখানা দেখেই আবার ফিরব দিয়াবাড়িতে। বিকালে জমাই বাজারে শিশু পার্কে ড্রাগন ট্রেনের চড়ব, চরকিতে ঘুরব। এরপর আব্বু-আম্মু-আপুকে নিয়ে নারকেলি হাঁসের মাংস খাব।”
মেট্রোরেলে পরিবার নিয়ে এই চলাচলকে ঈদ ভ্রমণ হিসেবে দেখছেন সরকারি কর্মকর্তা হাসিব উদ্দিন আহমেদ। দিয়াবাড়ি স্টেশনে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, “পরিবার নিয়ে বেরিয়েছি। যাওয়ার জায়গা কম ঢাকায়। পার্কগুলো ভালো না। ভাবলাম ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মেট্রোরেলে ঈদ ভ্রমণ করে মতিঝিল যাব। স্টার হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বাসায় ফিরে আসব মেট্রোরেলে।
“ট্রেনে উঠে দেখলাম পুরো ট্রেনে শুধু পরিবার আর পরিবার। সিঙ্গেলের সংখ্যা কম। দেখুন না কত বাচ্চা আনন্দ করছে। দিস ইজ এ রিয়াল হ্যাপিনেস অব দ্য ডে। সেজন্য আমি একে বলছি, ঈদ-ভ্রমণ… ঈদ ট্রাভেলিং।”