এবার মেডিকেলে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের কোটায় ২৬৯টি এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী কোটায় ৩৯টি আসন ছিল।
Published : 03 Feb 2025, 07:33 PM
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য বিভিন্ন কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর বলেছে, এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর কোটায় উত্তীর্ণদের ভর্তি করা হবে।
সোমবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে সরকারি মেডিকেল কলেজে সব কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের কোটার স্বপক্ষে সনদ/প্রমাণক যাচাইবাছাই চলছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকল কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।”
এবার মেডিকেলে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের কোটায় ২৬৯টি এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী কোটায় ৩৯টি আসন ছিল।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোটার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।
“মুক্তিযোদ্ধা কোটার কী হবে সেটা এখন উনাদের আলোচ্য ইস্যু। কাজেই এই ইস্যুটা সলভ না হলে আমরা সেটি নিয়ে কাজ করতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে আসছে বৃহস্পতিবার আবার আলোচনা হবে। ওখান থেকে কোটার বিষয়ে একটা ফাইনাল সিদ্ধান্ত আসলে আমরা ভর্তি শুরু করব।”
গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে ৫,৩৭২ জন নির্বাচিত হন, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ১৯৩ জন রয়েছেন।
কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন- এই যুক্তিতে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে রোববার রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলেরও দাবি তোলেন।
এরপর ওই ১৯৩ জনের ফল স্থগিত করা হয়। সেদিন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা তাদের কাগজপত্র যাচাই করব। সেজন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি- এই তিনদিন তারা সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসবে।
তবে যে ১৯৩ জনকে যাচাই বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল, তাদের অনেকেই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ‘প্রমাণ করে পারেনি’ বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, “নীতিমালা অনুাযায়ী এই কোটা রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। ১৯৩ জনের মধ্যে একটা বড় সংখ্যক (৪৯) অনুপস্থিত ছিল। যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের অনেকেই নাতি, নাতনি এমন ছিল। ফলে তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারেনি। তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না, প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
সেদিন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের মধ্যে ৭৪ জনের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেছে। ৪৯ জন আসেনি। সে হিসাবে ১১৯ জন প্রার্থী বাদ পড়েছে।
“আমরা যাচাইবাছাই করে ৭৪ জনের কাগজপত্র সঠিক পেয়েছি। তবে আরও যাচাইয়ের জন্য ওই ৭৪ জনের কাগজপত্র জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে। এছাড়া ৪৯ প্রার্থী আসেনি। মজার বিষয় হল, প্রথম দিন অনুপস্থিত প্রার্থীর সংখ্যা কম ছিল, দ্বিতীয় দিন তা বেড়েছে, তৃতীয় দিন অনুপস্থিত প্রার্থীর সংখ্যা আরও বেড়েছে।”
নাজমুল হোসেন বলেন, ৭৪ প্রার্থী যদি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়, তাহলে তা হবে মোট ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ১ দশমিক ৪ শতাংশ।