পয়ঃবর্জ্য: মেয়র আতিকের কলাগাছ অভিযান এবার বারিধারায়

এরপর বনানী ও নিকেতনে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন মেয়র আতিক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 05:05 PM
Updated : 11 Jan 2023, 05:05 PM

গুলশানের পর এবার বারিধারায় অভিযানে নেমে যেসব বাসায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ রয়েছে সেগুলোর সামনের ড্রেনে কলা গাছ ঢুকিয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

বুধবার উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে অভিযানের সময় বারিধারা ১১ নম্বর রোডের চারটি বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

“বাড়ির মালিকরা অনতিবিলম্বে নিজ থেকে এসব সংযোগ বন্ধ না করলে তা স্থায়ীভাবে বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন মেয়র,” বলে ডিএনসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি গুলশান ২ এলাকায় দুটি সড়কে পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ বন্ধে যেসব বাড়ির বর্জ্য পানির নিষ্কাশনের পাইপে আসছিল সেগুলো বন্ধ করে দিতে কলাগাছ ঢুকিয়ে দেওয়ার অদ্ভূত এ অভিযান শুরু করেন মেয়র।

সেদিন এতে ফল পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “যে কয়েকটা বাড়ির সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়েছি, তারা এখন পাগল হয়ে গেছে।”

অভিজাত এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে বুধবার অভিযানের সময় তিনি বলেন, “আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে, এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বাসার সামনে গিয়ে ড্রেনগুলো আমরা কলাগাছ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছি।… পরবর্তীতে বনানী ও নিকেতন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, দেশের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত বারিধারার ৫৫০টি বাড়ির মধ্যে ৩৪২ বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দেওয়া হয়েছে। সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া আট স্তরের ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে বারিধারা এলাকার মাত্র পাঁচটি বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দেওয়া হয়নি।

এছাড়া ২০৩টি বাড়ি আটটি শর্তের মধ্যে কিছু সংখ্যক শর্ত পূরণ করেছে। অন্যদিকে একদমই শর্ত পূরণ করেনি ৩৪২টি বাড়ি; যেগুলোর পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেনে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, “একটি অভিজাত এলাকায় যদি এমন চিত্র আমাদের দেখতে হয় তাহলে আমাদের আর কী করার আছে? অভিজাত এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ খুবই দুঃখজনক। বারবার বলছি সিটি করপোরেশনের সুয়ারেজ লাইনে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ দেওয়া যাবে না।”

তিনি জানান, ওয়াসার আলাদা লাইনে এসব বাড়ির বর্জ্য যাওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। যেখানে ওয়াসার লাইন নেই সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থায় ইটিপি প্লান্ট বসিয়ে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

সিটি করপোরেশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চারটি এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়ঃবর্জ্য সরাসরি সারফেস ড্রেন ও লেকে পড়ছে। মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সঠিকভাবে দেওয়া আছে এবং ৫২৪টি বাড়িতে আংশিকভাবে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। ফলে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার প্রতিনিধি, বুয়েট প্রতিনিধি, হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধির সমন্বয়ে স্যানিটেশন কমপ্লায়েন্স কমিটি জরিপ কাজটির তত্ত্বাবধান করেন।

পয়ঃবর্জ্যের কারণে লেকগুলোর পানি দূষিত হয়ে গেছে উল্লেখ করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “লেকে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। মশা নিধনে ন্যাচারাল সলিউশন সম্ভব হচ্ছে না মাছ চাষ করতে না পারার কারণে। আমরা ড্রেন ও খাল আর দূষিত হতে দিব না।” 

উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে নিজ বাড়িতে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়েছেন বলে জানান ডিএনসিসি মেয়র।

অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরীসহ বারিধারা সোসাইটির প্রতিনিধিরা।

Also Read: কলা গাছ অভিযানে ‘পাগল’ করছেন মেয়র আতিক