সর্বজনীন পেনশন: ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যেভাবে যুক্ত হবেন সরকারি চাকুরেরা

‘প্রত্যয়’ স্কিমে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূলবেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (যা কম হয় তা) কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2024, 11:56 AM
Updated : 20 March 2024, 11:56 AM

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে এবার যুক্ত করা হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের; ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করা হয়েছে তাদের জন্য।

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এই স্কিমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ১৩ মার্চ ‘প্রত্যয় স্কিম’কে যুক্ত করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ এর ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এসআরও আকারে প্রকাশ করা হয়।

সংশোধনী অনুযায়ী, সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগদানকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই স্কিমের নাম হবে ‘প্রত্যয়’ । 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে না এবং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুন্ন থাকবে। 

তবে, যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রত্যয় স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবসর জীবনে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন বিধায় ২০২৪ সালের ১ জুলাই এর পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

কিভাবে শুরু হবে ‘প্রত্যয়’ স্কিম

‘প্রত্যয়’ স্কিমে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূলবেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (যা কম হয় তা) কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে।

সেই টাকা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে।

এই ফান্ড জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন দেওয়া হবে।

বিদ্যমান সিপিএফ (কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ড ফান্ড) ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দিয়ে থাকে।

‘প্রত্যয়’ স্কিমে প্রতিষ্ঠান দেবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ, যা সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

এই স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২,৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমান টাকা ৩০ বছর ধরে চাঁদা দিলে তিনি অবসরে যাওয়ার পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২,৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন।

Also Read: ৪ ধরনের পেনশন স্কিম, যেভাবে যুক্ত হওয়া যাবে

এক্ষেত্রে ৩০ বছর ধরে মাসিক ২,৫০০ টাকা হারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে প্রদত্ত মোট চাঁদার পরিমাণ হবে নয় লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মোট চাঁদাও হবে সমপরিমাণ।

ওই ব্যক্তি যদি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে ৫ বছরে পেনশন প্রাপ্য হবেন এক কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ।

আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন বলে এ পরিমাণ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে।

জমাকৃত চাঁদার উপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে।

এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাসিক পেনশনের অর্থ পেতে থাকবেন, যা তাকে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

এর আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায় চার ধরনের স্কিম চালুর কথা বলা হয়। এগুলো হল- ‘প্রবাস’ ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’।

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে এই ‘প্রবাস’ স্কিমে অংশ নিতে পারেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য হচ্ছে ‘প্রগতি’ স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন।

অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ স্কিম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময় সময় প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) ‘সমতা’ স্কিমে অংশ নিতে পারেন।