ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ খান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
Published : 28 Nov 2024, 01:18 AM
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ২০২৫ সালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ ‘বিশেষ বৈশ্বিক সম্মেলনের’ আয়োজনে সম্মতি দিয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।
এ সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটি টেকসই নতুন দিক খুঁজে পাওয়ার আশার কথা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ খান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন করিম এ খান। এ সময় এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমারের পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রসিকিউটর প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, তার অফিস মিয়ানমার সামরিক সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছে।
করিম খান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশেষ বৈশ্বিক সম্মেলনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানকে সমর্থন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০২৫ সালে এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। সম্মেলনের স্থান, তারিখ এবং কার্যপ্রণালি ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নির্ধারণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক সব অংশীজনকে একটি টেবিলে নিয়ে এসে সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে, বিশেষ করে বাংলাদেশে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং তাদের শিশুদের দুঃখ-দুর্দশা মোকাবিলা করার জন্য।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা হতাশাগ্রস্ত তরুণদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এটি বিস্ফোরিত না হয়।''
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রবেশ এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার তার সাম্প্রতিক আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, যা বাস্তুচ্যুত মানুষকে সহায়তা করতে এবং চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন,"নিরাপদ অঞ্চলের নিরাপত্তা জাতিসংঘ দ্বারা নিশ্চিত করা উচিত। যখন লড়াই থেমে যাবে, তখন এই অঞ্চলে বসবাসকারীরা সহজেই তাদের নিজ নিজ স্থানে ফিরে যেতে পারবে।"
ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময়কার গণহত্যা এবং তার প্রায় ১৬ বছরের দীর্ঘ শাসনকালে ঘটে যাওয়া হাজারো গুমের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনার জন্য আইসিসিতে পদক্ষেপ নেবে।”
আইসিসি প্রসিকিউটর বলেন, তারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা করতে চান, যেখানে শেখ হাসিনা এবং তার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সফরকারী করিম এ খান এবং তার প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন।
খলিলুর রহমান বলেন,"আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রত্যাশা করি।"