Published : 28 Apr 2025, 04:51 PM
মূলধারার শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
তার ভাষ্যে, “মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার। কারণ কারিগরি শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়, এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে মিস্ত্রি বানানোর কারখানা। এই ধরনের নেতিবাচক ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
“কারিগরি শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত, এখানে কাঠামোগত সংস্কারের দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রেডভিত্তিক শিক্ষকের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও নিউ টেকনোলজির অভাব রয়েছে। এসব দূর করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
সোমবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে ‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন অধ্যাপক সি আর আবরার।
তিনি বলেন, “কারিগরি শিক্ষার্থীরা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সামনের সারির কারিগর। এরাই কলকারখানা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত জায়গায় তাদের শ্রম, তাদের যোগ্যতা- এটা দিয়েই করবে।
“আমি যতই ম্যানেজমেন্ট শিখি, ওগুলোও গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোরও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যারা সবচেয়ে বেশি এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন, তাদেরকে যদি আমরা সঠিকভাবে প্ল্যান করে সংযুক্ত করতে পারি, জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ম্যাসিভ উল্লম্ফন ঘটবে।”
কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রধান উপদেষ্টার চাইতে কেউ বেশি ধারণ করেন না মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “উনার সঙ্গে (প্রধান উপদেষ্টা) আমার কথা হয়েছে অতীতেও। যখন দায়িত্ব নিয়েছি- উনি আমাকে বলেছেন, ‘তোমার এই দিকটা কিন্তু একটা বড় রকমের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে’। আমি সেটা স্মরণ করি ও সেজন্য কাজ করছি।
“যদি এই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান- যেগুলো কারিগরি শিক্ষা দিচ্ছে, সেগুলোর যদি বাস্তবের সাথে আরেকটু সম্পৃক্ততা থাকতো, চাহিদা অনুযায়ী তারা যদি দক্ষ কারিগর তৈরি করতে সাহায্য করতেন, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলো থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তারা যদি আর একটু বিশ্বের চাহিদা, এমনকি দেশের মধ্যে চাহিদা কী সেগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হতেন।”
অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “আমাদের পলিটিক্যাল লিডারশিপ মিসরেবলি ফেইল করেছে। আপনারা কেউ কি কোনোদিন বলতে পারবেন যে- এই যে পার্লামেন্টে কারিগরি শিক্ষা, এমনকি সাধারণ শিক্ষা নিয়ে মিনিংফুল বিতর্ক, আলাপ-আলোচনা কি হয়েছে?
“আমার কোনদিনও মনে হয় না- সে ধরনের আলাপ আলোচনা হয়েছে এবং সেগুলো প্রায়োগিক না। স্বাস্থ্য কি আলোচনা হয়েছে পার্লামেন্টে? সেরকম কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ এই সরকার আসার পরে প্রথম কাজ তারা যেটা করেছেন, তারা শ্বেতপত্র প্রণয়ন করেছেন। বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থাটা কী, সেটা আমাদের জানতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, “চিফ অ্যাডভাইজার যখন আমাকে বললেন, ‘এই দায়িত্বটা নিতে হবে’; আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু যখন তিনি বললেন, ‘আমার ধারণা, তুমি পারবে’।
“আমার তখন মনে হলো, এই যে কতগুলো স্বপ্ন দেখেছিলাম- কারিগরি শিক্ষা, অভিবাসী শ্রমিকদের ভালো করবার একটা সুযোগ এখানে আছে। আর বৃহত্তর সুযোগ তো রয়েছেই “
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ বছর শিক্ষকতা করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কোনোদিন কোনো দলীয় লাল-নীল-সাদা যে দোষে দুষ্ট, যে ব্যবস্থা- তার মধ্যে ঢুকিনি। শুধু আমি না, অনারেবল এক্সেপশনস অনেক রয়েছে। কিন্তু গড্ডালিকা প্রবাহে যার নিজেদের গা ভাসিয়েছেন, যারা দলীয় রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন, আমার খুব করুণা হয় সেইসব মানুষের জন্য।
“তারা নিজের সুবিধার জন্য, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় শিক্ষকতা সুযোগ পেয়েছেন; কত বড় কন্ট্রিবিউশনের সুযোগ তারা পেয়েছেন, কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন দলের হ্যাঙারের বুদ্ধিজীবীতে তারা পরিণত হয়েছেন।”
জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে মন্তব্য করে সি আর আবরার বলেন, “সে কারণে আচরণে পার্থক্য থাকবে। সবার কাছ থেকে স্বাভাবিক আচরণ আশা করা যাবে না।”
এক্ষেত্রে তাদেরকে বুঝিয়ে, আদর করে পাঠদানের পরমর্শ দেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
“আমরা একটা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। দাবি-দাওয়াগুলো সম্মানের সাথে উপস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমদ খান।