‘‘জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি লবির প্রভাবের কারণে নীতি দখল, রাষ্ট্র দখল, পুঁজিবাদী দুর্নীতি, লুটপাট এবং দুর্নীতির মত সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
Published : 23 Nov 2024, 05:28 PM
জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিলে অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে এবং উন্নয়ন টেকসই হবে বলে দাবি করেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেম।
‘জ্বালানি মূল্য ওঠানামার সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট’ বিষয়ে নিজেদের করা গবেষণার ফল তুলে ধরে শনিবার রাজধানীতে এক সেমিনারে এ কথা বলেন গবেষণা সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সেলিম রায়হান।
গবেষণায় জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্যকরণ, কার্যকর মুদ্রানীতি সামঞ্জস্য, গতিশীল মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়া, জ্বালানি পরিকল্পনার পুনর্মূল্যায়ন, কৌশলগত জ্বালানির মজুদাগার গঠন, জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়ন, দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, “এসব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।”
সেমিনারে সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি লবির প্রভাবের কারণে নীতি দখল, রাষ্ট্র দখল, পুঁজিবাদী দুর্নীতি, লুটপাট এবং দুর্নীতির মত সমস্যা তৈরি হয়েছে। এগুলোর ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।”
জ্বালানি নীতি ও পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর সরকার পরিবর্তনের ফলে নতুন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করি, এই সম্ভাবনাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না।”
অনুষ্ঠানে তিনটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মো. তুহিন আহমেদ ও গবেষণা সহযোগী একরামুল হাসান।
‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও শক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের গুণমান এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির গতিবিধির মূল্যায়ন’ শিরোনামে দ্বিতীয় গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ সালের ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধির (বিশেষ বিধান) প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রকে উপেক্ষা করে ‘উচ্চ বিদ্যুৎ মূল্য’ নির্ধারণ করে। এটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ‘দুর্বল করেছে’।
‘বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মাঝে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়ন’, শিরোনামে তৃতীয় গবেষণাটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিশেষত সৌর এবং বায়ু বিদ্যুৎ উন্নয়নে, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা।
এই গবেষণার নীতি প্রস্তাবনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, গ্রিন বন্ড, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড-এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে অর্থায়নের সুপারিশ করা হয়।
অনুদান, ঋণ এবং ইক্যুইটির মিশ্রণে একটি ‘বিশেষায়িত নবায়নযোগ্য জ্বালানি তহবিল’ গঠন হলে তা ছোট ও মাঝারি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, “রেন্টাল-কুইক রেন্টালে প্রণোদনার নামে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ায় বিদ্যুৎ খাতে ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’ তৈরি হয়েছে।”
বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ দ্রুত বৃদ্ধির আইনের বিষয়ে বলেন, “এটি সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়েছিল। সেটি সমস্যা তৈরি করেছে যখন অসীম সময়ের জন্য এটিকে বাড়ানো শুরু করা হল।
“এই সরকার এসেই সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। আদালতও ওই আইনের দুটি ধারা রহিত করেছেন। তবে আইনের সুযোগ নিয়ে যে কাজ করা হয়েছে তাতে প্রশ্নের অনেক সুযোগ থাকে।”
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকনোমিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)র লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম বলেন, “তেলভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে ক্রমান্বয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে সরবরাহ করতে হবে এবং সমান্তরালে গ্রিডের আধুনিকায়নও করতে হবে।”