অভিযানকালে একটি শিশুকে মারধরের অভিযোগ তুলে তার ওপর চড়াও হয় সেখানে জড়ো হওয়া লোকজন।
Published : 07 Oct 2024, 11:46 PM
রাজধানীর বনানীতে ফুটপাত ও সড়ক থেকে ভাসমান ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন পুলিশের একজন পরিদর্শক।
ফুটপাতের ভাসমান ব্যবসায়ীরা একটি শিশুকে মারধরের অভিযোগ তুলে বনানী এলাকার প্যাট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) একরামুল হককে অপদস্থ করে, যাতে যোগ দেয় কিছু শিক্ষার্থীও।
সোমবার দুপুরের এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অভিযানের সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। তাকে টানাহেঁচড়া করতে থাকে কিছু শিক্ষার্থীসহ লোকজন।
ভুক্তভোগী পিআই একরামুল হক বলেন, তারা উচ্ছেদ অভিযান শেষে গাড়িতে ওঠার সময় হঠাৎ একজন হকার চিৎকার করে বলা শুরু করেন পুলিশ তার ছোট ছেলেটিকে মারধর করেছে। এই কথায় হঠাৎ অনেক লোক জড়ো হয়ে তাকে ধাক্কাধাক্কি, টানাহেঁচড়া করেন। তিনি বারবারই বলতে থাকেন তারা কোনো শিশুকে মারেননি, কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) খলিলুর রহমান জানান, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে পণ্য বিক্রি করছিল কিছু ভাসমান ব্যবসায়ী। যে কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল, ফুটপাতেও হাঁটা যাচ্ছিল না। যেহেতু এলাকাটি শহরের অভিজাত এবং কূটনীতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত তাই সেখান থেকে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের অভিযান চালায় পুলিশ। তখন ব্যবসায়ীরা বাধা দেয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এক শ্রেণির মানুষও আছেন যারা ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ চান না। এসময়ই তারা বনানীর পিআই (টহল পরিদর্শক) একরামুল হককে একা পেয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে।
ঘটনাস্থলে থাকা একজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পুলিশ কর্মকর্তা এমদাদুল ফুটপাত উচ্ছেদে এসে একটি শিশুকে বেদম মারধর করেন। এরপরই স্থানীয় দোকানদার, রিকশাচালকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানান।
পিআই একরামুলকে ধাক্কাধাক্কি ও টানাহেঁচড়ার বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর মধ্যে বেসরকারি নাগরিক টিভির একটি পাঁচ মিনিটের ফুটেজে দেখা যায় লোকজন পুলিশের পোশাক পরিহিত পিআই এমদাদুলকে ঘিরে ধরে আছেন, উত্তেজিত হয়ে কথা বলছেন। এর মধ্যে একজন বলছেন, ‘গায়ে হাত দেবেন না’। কিন্তু কেউ কারও কথা শুনছে না। এ ঘটনা চলে মিনেট পাঁচেক।
ওই ভিডিও ফুটেজে একজনকে বলতে শোনা যায়, পুলিশ একটি শিশুকে মারধর করেছেন।
তবে ভিডিওতে একরামুলকে তা অস্বীকার করে বলতে দেখা যায়, তিনি কোনো শিশুকে মারধর করেননি।
পরে যোগাযোগ করা হলে পিআই একরামুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর ১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে আমরা যখন গাড়িতে উঠব তখন একজন হকার চিৎকার করে বলা শুরু করে তার ছেলেকে আমরা মারধর করেছি। সে সিনক্রিয়েট করা শুরু করলে লোকজন জড়ো হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। আমি যতই বলি যে আমি কাউকে মারধর করিনি কিন্তু লোকজন আমার কথা শুনেই না। পরে অবশ্য প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে সাহায্য করেছে।”
উচ্ছেদ অভিযানে বনানী সোসাইটির প্রতিনিধিদের থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেখানে যেহেতু আমি লিডিংয়ে ছিলাম তারা আমাকে টার্গেট করছে। আমি মবের মধ্যে পড়ে যাই। এখন মবের নামে কী হচ্ছে আপনারা জানেন। আমার ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়েছে। ওগুলো দেখেন, আমাদের কোন দোষ আছে কী না।
“আমরা এখানে কয়েকদিন ধরেই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। আবার মোটরচালিত রিকশার বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। আমার ওপর তারাও চড়াও হয়েছে। তারা বিষয়গুলো নিয়ে খুবই বিরক্ত ছিল। এখন আমরা ধরতে গেলেই তারা এক হচ্ছে। আমরা ট্রাবলে পড়ছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কাজগুলো এগিয়ে নেব কীভাবে।”