একডজন প্রজাতির অর্কিড গাছ মেলায় সাজিয়েছেন আয়োজকরা; গাছের আকার ও ফুল অনুযায়ী দামও বিভিন্ন রকম।
Published : 04 Oct 2024, 07:32 PM
সারি সারি গাছে ফুটে আছে লাল, সাদা, হলুদ আর বেগুনি রঙের ফুল; বাহারি রঙা অর্কিডের গাছগুলো স্টলে সাজিয়েছে ‘বাংলাদেশ অর্কিড সোসাইটি’। দর্শনার্থীদের অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেউ পছন্দের অর্কিড কিনে বাসায় ফিরছেন।
ঢাকার গুলশান ২ নম্বরের ৯৫ রোডের একটি বাসায় অর্কিডের মেলা বসিয়েছে সংগঠনটি। একডজন প্রজাতির অর্কিড গাছ মেলায় সাজিয়েছেন আয়োজকরা।
শুক্রবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা মেলায় প্রবেশ করতে পারছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
অর্কিড মেলা দেখতে শুক্রবার ধানমন্ডি থেকে গুলশানে আসেন নাসিম আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় সব প্রজাতিই আমার আছে। বারান্দায় রেখে দিয়েছি। তারপরও অর্কিড এত ভালো, এত কালারফুল, সেটা দেখার জন্য ছুটে আসা। কিনতেও এসেছি। যতবারই মেলা হয় আসার চেষ্টা করি।”
অর্কিড সোসাইটির সদস্য লুবনা আক্তার বলেন, যে অর্কিডগুলো তার কাছে সংগ্রহে নেই, সেগুলো সংগ্রহ করতেই মেলায় এসেছেন।
তিনি বলেন, “সোসাইটির সদস্যরা নানা প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহ করে। তারপর মেলার মাধ্যমে সেটা আরেকজনের সঙ্গে বিনিময় করা হয়। এভাবে সংগ্রহের পরিধিটা আরও বাড়ায় আরকি।
“প্রতিবার আমিও স্টল দেই, এবার দেওয়া হয়নি। যখন গাছ বেশি হয়, তখন সেগুলো স্টলে বিক্রি করি।”
মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড গাছের বিভিন্ন দাম বেঁধে দিয়েছেন আয়োজকরা। এর মধ্যে ডেনড্রোবিয়াম অর্কিড ৬০০ থেকে ১১০০ টাকা, অনসিডিয়াম বা ড্যান্সিং ডল অর্কিড ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ক্যাটলিয়া অর্কিড ১২০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ব্রাসোক্যাটলিয়া অর্কিড ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ব্রাসোভোলা অর্কিড ৮০০ টাকা, মোকারা অর্কিড ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, ভ্যান্ডা অর্কিড দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার, ডোরাইটনোপসিস অর্কিড ২ হাজার টাকা, ডোরাইটস অর্কিড ২ হাজার টাকা, স্পেসিস ৫০০ থেকে ২ হাজার, গ্রাউন অর্কিড আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, ফেলানপসিস অর্কিড দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ফেলানপসিস অর্কিড এর চারাগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
এবার মেলায় বসেছে ১০টি স্টল। অর্কিড সোসাইটির যারা সদস্য, তারাই কেবল স্টল দিতে পারছেন মেলায়। তবে কিনতে পারছেন সব শ্রেণির ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, এবার অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতার সমাগম কম। আশ্বিনের মাঝামাঝিতে টানা বৃষ্টি আর প্রচার কম হওয়াকে এর কারণ বলছেন তারা।
প্রতিবারই অর্কিড সোসাইটির মেলায় স্টল দিয়ে থাকেন ‘রানভীর অর্কিড নার্সারির’ সত্ত্বাধিকারী জালালউদ্দন। তিনি মেলায় গাছ আনেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে। এবার তার স্টলে বিক্রি হচ্ছে ডেনড্রোবিয়াম আর ক্যাটালিয়ান অর্কিড। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জালালউদ্দিন বিক্রি করেছেন ২০টি গাছ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজকে প্রথম দিন তো মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে এবার মানুষ অনেক কম। বৃষ্টির হচ্ছে এ কারণে হয়ত মানুষ কম আসছে, আর এবার প্রচারও কম; মানুষ না জানলে আসবে কীভাবে? বিকাল নাগাদ বাড়বে আশা করি।”
তার ভাষ্য, “অনেকের ছাদ নাই, বারান্দায় ছোট জায়গা, সেখানে লাগাতে পারে সেজন্যই অর্কিড চাষ করা। অর্কিড ফুল ফুটলে এক থেকে দেড় মাস থাকে, আর সব সময়ই ফুল ফুটতে থাকে। অন্য ফুল তো কয়েকদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়৷”
মেলায় মজুমদার আর্কিড স্টলে বিক্রি হচ্ছে ডেনড্রোবিয়াম, ড্যান্সিং ডল আর গ্রাউন অর্কিড। তবে এ স্টলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘ডেনড্রোবিয়াম মিনি’ প্রজাতির গাছ। বাড্ডার ফকিরখালীতে রয়েছে তাদের বাগান। সেখানে কেবল অর্কিডই চাষ করা হয়।
মজুমদার আর্কিড স্টলের বিক্রয়কর্মী আহমেদ শরীফ বলেন, “দুপুর পর্যন্ত আমরা আট থেকে ১০টি গাছ বিক্রি করেছি। ৬৭টি গাছ নিয়ে আসছি আমরা। সোসাইটি থেকে দামটা নির্ধারণ করা হয়েছে, এর কম বেশি করা হয় না। ধরেন, ডেনড্রোবিয়াম বড়টা ৪৫০ আর ছোটটা ৫০০ টাকায় বিক্রি করছি আমরা।
“যেটার কালার যত মাধুর্য, সেটার রেট বেশি। ডেনড্রোবিয়াম মিনির কালারটা ভালো হয়, সেকারণে এটা বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
মেলার বিষয়ে বাংলাদেশ অর্কিড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফাইজা এলা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্কিড আমরা নিজেদের বারান্দায় লাগাতাম। সেটাকে নিজেদের জায়গা থেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি।”
সোসাইটির সভাপতি নাসিম ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৪০ বছর ধরে গুলশানে তার বাসায় অর্কিড মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এবার স্টলগুলোতে এসেছে ২৫০ থেকে ৩০০টি গাছ।
তিনি বলেন, “কালকে (শনিবার) আরও ২৫০ গাছ আসবে আশা করি। এবার কিছুটা স্টল কম বসেছে। এবার গাছে ফুল কম হয়েছে। এ কারণে মেলায় গাছের সংখ্যা কম।
“অর্কিড গাছ খুবই দামি, সেকারণে সবাই কিনতে চায় না। সবাই যাতে বুঝতে পারে, জানতে পারে, অর্কিডের প্রজাতিগুলো চিনতে পারে, সেজন্যই মেলার আয়োজন করা হয়।”
প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্কিড মেলার আয়োজন করা হয়। তবে এবার অগাস্টে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে সময় পেছানো হয়েছে। আগামী বছর নভেম্বর মাসের শুরুতে আর্কিড মেলার আয়োজনের কথা জানান নাসিম ইকবাল।